ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রের সব মন্ত্রীকে তলব করা হয়েছে। এসেছেন বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও। গোটা দেশ থেকেও দলের শীর্ষ নেতারা আসছেন। ঢাক-ঢোল-ফুলের ব্যবস্থাও হচ্ছে। তবু যেন ‘কিছু একটা নেই’। বিজেপির মতো দলে সর্বভারতীয় সভাপতির নির্বাচন। দলের সংগঠনের দৃষ্টিতে এটাই সবচেয়ে বড় ঘটনা। আগামিকাল সকাল থেকে শুরু হবে ভোটের প্রক্রিয়া। জগৎপ্রকাশ নড্ডা ছাড়া অন্য কেউ মনোনয়ন পেশ করবেন, এমন সম্ভাবনাও কেউ দেখছেন না। ফলে অমিত শাহের উত্তরসূরি হতে চলেছেন তিনিই। রাতে অমিত শাহ দলের দফতরে বৈঠক করলেন। হাজির থাকলেন নড্ডা-সহ কয়েক জন শীর্ষ নেতা।
রাত দশটা নাগাদ দলের তরফে জানানো হল, আগামিকাল দুপুর আড়াইটে নাগাদ পরবর্তী দলীয় সভাপতির নাম ঘোষণা করা হবে। বিজেপির এক নেতা বলছেন, ‘‘ঠিক ছিল, গত শুক্রবার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রাধামোহন সিংহ সাংবাদিক বৈঠক করে সভাপতি পদে নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করবেন। কিন্তু সেটি করতে দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র একটি বিবৃতি জারি করে জানানো হয়। অথচ এর আগে সব সভাপতি নির্বাচনের আগে ও পরে ধুমধাম করা হয়েছে।’’ বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল, আগামিকাল সকাল দশটা থেকে দুপুর পর্যন্ত নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলবে। প্রয়োজনে মঙ্গলবার ভোটাভুটি হবে। কিন্তু এ দিনের এই ঘোষণার পরে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে বিজেপির সভাপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্থানই কি নেই? তা না হলে নির্বাচন হওয়ার আগের দিনই সভাপতির নাম ঘোষণার সময় ঘোষণা করে দেওয়া হল কী ভাবে?
এ বারে সভাপতি নির্বাচনের দিনে একই সময়ে রাখা হয়েছে পড়ুয়াদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আলোচনা। নাম দেওয়া হয়েছে ‘পরীক্ষা পে চর্চা’। নানা রাজ্য থেকে ছাত্রেরা ইতিমধ্যেই দিল্লিতে এসেছে। আগামিকাল সকাল ১১টা থেকে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই আজ তিনটি টুইট করে ফেলেছেন। কিছু মন্ত্রী থাকবেন জম্মু-কাশ্মীরেও। বিজেপি নেতারাও কবুল করছেন, কাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানটিই দল ও সরকারের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় কর্মসূচি।
প্রশ্ন উঠছে যাবতীয় আড়ম্বর দেখালেও বিজেপি সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রচার কি একটু ‘খাটো’ করা হচ্ছে? যদি তাই হয়, তবে কেন?
বিজেপি নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, নড্ডার অভিষেকের আগে পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের অর্ধেকের বেশি রাজ্যে সভাপতি পদে নির্বাচন হয়েছে। আর সিংহভাগ রাজ্যেই তাঁরাই সভাপতি পদে বহাল থেকেছেন, অমিত শাহের জমানায় যাঁরা দায়িত্ব পেয়েছেন। অর্থাৎ, বিজেপির নতুন সভাপতিকে রাজ্যে-রাজ্যে তাঁদের নিয়েই কাজ করতে হবে, যাঁদের আনুগত্য রয়েছে অমিত শাহের প্রতি। শুধু তাই নয়, সংগঠনের দায়িত্বেও অমিত শাহ বি এল সন্তোষকে নিয়ে এসেছেন, যাঁর কার্যশৈলী অনেকটা অমিত শাহের মতোই আক্রমণাত্মক।
বিজেপি শিবিরের দাবি, অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, লালকৃষ্ণ আডবাণী ছিলেন উপপ্রধানমন্ত্রী। সেই সময়ে কুশাভাই ঠাকরে, বঙ্গারু লক্ষ্মণ, জনা কৃষ্ণমূর্তি, বেঙ্কাইয়া নায়ডুর মতো নেতারা বিজেপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর মধ্যে কুশাভাই ঠাকরের একটু দাপট ছিল। কিন্তু বাকিরা অটল-আডবাণীর ইশারাতেই দল চালাতেন। এখন ক্ষমতার রাশ নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটির হাতে। প্রশ্ন উঠছে, নড্ডার অভিষেকের পর কি বিজেপির পুরনো রেওয়াজই ফের বহাল হবে?