স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের আদালতে টেনে নেওয়ার হুমকি দিল বিজেপি। রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায় বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ ব্যাঙ্ক, এটিএমে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তুলছেন। নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কারও ক্ষোভ নেই দেখে কংগ্রেসিরা দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন। তাই এখন তাঁরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। আবোল-তাবোল কথা বলছেন।’’ তাতে হিতে বিপরীত হতে চলেছে বলে মন্তব্য করে রাজদীপবাবু বলেন, ‘‘প্রতিটি অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে। না হলে আমরা আইনের দ্বারস্থ হবো।’’
নোট বদলে দেশের অর্থনীতি মজবুত হচ্ছে বলে দাবি করে রাজদীপবাবু বলেন, ‘‘এখনই প্রত্যক্ষ কর, অপ্রত্যক্ষ কর, আবগারি শুল্ক-সহ সব ধরনের রাজস্ব আদায় গত বছরের তুলনায় বেশি।’’
বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের নিয়ে রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোঁহাইয়ের মন্তব্যে বনধ, মিছিলের পিছনেও কংগ্রেসের উস্কানি ছিল বলে অভিযোগ করেন বিজেপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক। রাজদীপবাবু বলেন, ‘‘আসলে কংগ্রেস কোনও ইস্যু না পেয়ে এ সব আঁকড়ে ধরে অস্তিত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। না হলে এ নিয়ে এত হইচইয়ের কথা নয়।’’ তাঁর বক্তব্য, বিজেপি এরই মধ্যে বরাকের সরকারি ভাষা নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল নিজে রাজেনবাবুর মন্তব্যের বিরোধিতা করছেন। রাজদীপবাবু আজও বলেন, ‘‘ইতিহাস না জেনে, কোন কথার কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে, সে সব না বুঝে রাজেন গোঁহাই ওই মন্তব্য করেছিলেন। এই ধরনের বক্তব্য তাঁর পক্ষে অনুচিত হয়েছে।’’ তাই বলে কংগ্রেসিদের এ নিয়ে কোনও মন্তব্য শোভা পায় না বলেও দাবি করেন রাজদীপবাবু। তাঁর যুক্তি, অসমের বাঙালিদের দুরবস্থার জন্য সব চেয়ে বেশি দায়ী কংগ্রেসই। শ্রীহট্ট গণভোট থেকে শুরু করে নাগরিকত্ব— সব কিছুতে তাঁদের ভূমিকায় বাঙালি-বিদ্বেষী রূপ ধরা পড়ে। উদাহরণ টেনে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ১৯৪৫ সালের অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রস্তাব পড়ে শোনান। তাতে লেখা— শ্রীহট্ট জেলা অসমে অন্তর্ভুক্ত হলে অসমিয়া সংস্কৃতি বিপন্ন হবে। এই অঞ্চলে অশান্তিরও আশঙ্কা রয়েছে। এই ভাবনার প্রতিফলন দেখা যায় ১৯৪৭ সালের ৭ জুলাই অনুষ্ঠিত গণভোটেও। ব্রিটিশ সে সময় চা জনগোষ্ঠীকে ভোটার হিসেবে মানতে রাজি হয়নি। কিন্তু কংগ্রেস সে নিয়ে কোনও শব্দ করেনি তখন। এর দরুন শ্রীহট্টের অসমভুক্তির পক্ষে ভোট পড়েছিল ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪১টি। আর পাকিস্তানে থাকার পক্ষে পড়ে ২ লক্ষ ৩৯ হাজার ৬১৯টি। চা জনগোষ্ঠীকে ভোটের সুযোগ দেওয়া হলে চিত্র বদলে যেত।
শরণার্থী সমস্যা কংগ্রেসেরই সৃষ্টি— এই মন্তব্য করে রাজদীপ দাবি করেন, অন্য যে সব এলাকা দিয়ে শরণার্থীরা ভারতে ঢুকেছিলেন, সব জায়গায় সঠিক নথিভুক্তকরণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কে কবে ভারতে ঢুকেছেন, তার রেকর্ড রয়েছে। অসমের কংগ্রেস সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে বহু মানুষ অসহায় অবস্থায়। তাঁরা কবে থেকে এই দেশে রয়েছেন, এর কোনও প্রামাণ্য নথি না আছে তাঁদের হাতে, না সরকারের ঘরে। তাই সবাইকে বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করা হয়। ১৯৬১ সালের ভাষা আন্দোলনের দিনগুলিতে যে কেন্দ্র-রাজ্যে তাদেরই সরকার ছিল, সে কথাও তিনি কংগ্রেসিদের স্মরণ করিয়ে দেন। পুলিশের গুলিতে ১১ তরুণ-তরুণীর মৃত্যুবরণের পরও যে তাঁদের শহিদের মর্যাদা দেওয়া হয়নি, তাও শোনান রাজদীপবাবু।