দিল্লিতে দলীয় বৈঠকে জে পি নড্ডা ও অমিত শাহ। মঙ্গলবার। পিটিআই
লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী শিবিরকে একজোট করতে দিল্লিতে সক্রিয় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তাই দেরি না করে নিজেদের দলীয় শক্তি যাচাইয়ে নেমে পড়লেন অমিত শাহ-জে পি নড্ডারা। গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ৫ রাজ্যের যে ১৪৪টি আসনে বিজেপি প্রায় জেতার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেও হেরে গিয়েছিল, সেই সব কেন্দ্রে দলের শক্তি এখন কী অবস্থায় রয়েছে, তা নিয়ে আজ চুলচেরা বিশ্লেষণে বসল দল।
আজকের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ ও পঞ্জাবের ১৪৪টি লোকসভা আসন নিয়ে আলোচনা হয়। মাস দুয়েক আগে স্মৃতি ইরানি, ভূপেন্দ্র যাদব, পুরষোত্তম রূপালা, গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত, এস পি বঘেলের মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ওই পাঁচটি রাজ্যের বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রে সমীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে ছিলেন উত্তরপ্রদেশের ওবিসি নেতা এস পি বঘেল। তিনি মথুরাপুর ও আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্র ঘুরে সবিস্তার রিপোর্ট দেন। সূত্রের মতে, ওই রিপোর্টে রাজ্য নেতৃত্বের দাবি মেনে নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বঘেল জানান যে, পশ্চিমবঙ্গে গো-বলয়ের মতো জাতভিত্তিক ভোট হয় না। তাই এ রাজ্যে বিজেপির চিরাচরিত জাতভিত্তিক ভোটের রাজনীতির বদলে বিকল্প পথের প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সন্ত্রাস, বিরোধী দলের সমর্থকদের সরকারি সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের মন জয়ের রাজনীতির মতো বিষয়গুলিও স্থান পায় তাঁর রিপোর্টে।
বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, আগামী লোকসভাতেও একক শক্তিতে ক্ষমতা দখলে সক্রিয় দল। কিন্তু সাড়ে আট বছরের শাসনের শেষে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া যে দেশ জুড়েই রয়েছে, তা বিলক্ষণ বুঝছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। উপরন্তু বিরোধী জোট সত্যিই দানা বাঁধলে স্বল্প ব্যবধানে জেতা একাধিক আসন হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। তাই গত লোকসভায় কান ঘেঁষে বেরিয়ে যাওয়া ওই ১৪৪টি আসন জিততে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা ওই লোকসভা কেন্দ্রগুলির অন্তর্গত বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রে ঘুরে সেখানে দলের শক্তি, দুর্বলতা, জেতা-হারার সম্ভাবনা কতটা রয়েছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই রিপোর্ট দিয়েছেন। সেই রিপোর্টের পাশাপাশি লোকসভা কেন্দ্রগুলির জনসংখ্যার জাতিবিন্যাস, ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, ভোটারদের ধর্মীয় পরিচয়, আর্থিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক মতাদর্শ তথা তাঁরা মূলত কোন দলের সমর্থক, তাঁদের কাছে টানতে কী রণকৌশল নেওয়া উচিত— আসন ধরে ধরে এ সব নিয়েই আজ আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ওই ১৪৪টি লোকসভা কেন্দ্রে মন্ত্রীদের সফরের পরে তাঁদের দেওয়া পরামর্শের প্রয়োগ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে অন্য কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে খুব শীঘ্রই ফের ওই রাজ্যগুলি পরিদর্শনে পাঠানো হবে। আবার এক প্রস্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরে পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বসবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তার ভিত্তিতেই ঠিক হবে পরবর্তী রণকৌশল।