ধাপে ধাপে এগিয়ে এ বার জম্মু-কাশ্মীরে ভোটের জন্য পুরোপুরি ঝাঁপিয়ে পড়ল বিজেপি। লোকসভা নির্বাচন শেষ হতেই তলে তলে এর প্রস্তুতি শুরু করেছিল তারা। সম্প্রতি বাড়তি সেনা পাঠানো হয়েছে রাজ্যটিতে। গত কাল রাতে এ রাজ্যের নির্বাচন সংক্রান্ত বৈঠকে সাংগঠনিক রদবদল ঘটিয়েছে বিজেপি। আর আজ পদক্ষেপ করা হল প্রশাসনিক পর্যায়ে। জম্মু-কাশ্মীরের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির জন্য শিক্ষা ও চাকরিতে ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। দলের নেতাদের কথাতেই স্পষ্ট, জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য পুরো দস্তুর প্রস্তুত এখন শাসক শিবির।
অক্টোবরে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় ভোট হওয়ার কথা। সূত্রের খবর, মোদী সরকারের লক্ষ্যই হল, ওই দুই রাজ্যের সঙ্গেই জম্মু-কাশ্মীরে ভোট সেরে ফেলা। আর তাই বিজেপি নেতা রাম মাধব আজ বলেন, ‘‘উপত্যকায় ভোটের জন্য প্রস্তুত বিজেপি।’’
সূত্রের খবর, উপত্যকার নির্বাচন ও সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জুলাইয়ে স্বরাষ্ট্র কর্তারা একাধিক বার বৈঠক করেছেন নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের সঙ্গে। প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবে গত সপ্তাহে দশ হাজার আধাসেনা পাঠানো হয় উপত্যকায়। গত কাল রাজ্যের নির্বাচনী রণকৌশল ঠিক করতে বৈঠক বসে বিজেপির কোর কমিটি। সেখানে ঠিক হয়, ১৫ অগস্টের পর থেকেই ওই রাজ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি সারতে প্রকাশ্যে ঝাঁপিয়ে পড়বে দল। তার আগে জম্মু-কাশ্মীরবাসীকে সুখবরও দিতে চায় কেন্দ্র। এবং সেই লক্ষ্যে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ওই রাজ্যের গরিবদের জন্য সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লোকসভা নির্বাচনের আগেই ওই সংবিধান সংশোধনীটি এনেছিল কেন্দ্র। এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়, ‘‘উপত্যকায় রাষ্ট্রপতি শাসন থাকায় আইনটি সংসদে পাশ করানোর দায়িত্ব কেন্দ্রের। চলতি অধিবেশনেই বিলটি আনা হবে।’’
গত কাল কোর কমিটির বৈঠকে সাংবিধানিক রদবদল করে সহ-সভাপতি অবিনাশ রাই খন্নাকে জম্মু-কাশ্মীরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দলের দাবি, কাশ্মীরের মানুষ এখন বিকল্পের খোঁজে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। ইতিমধ্যেই কাশ্মীরেই এক লক্ষ মানুষ সদস্য হয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিংহের দাবি, ‘‘কুপওয়ার কারনা বলে একটি সীমান্তবর্তী গ্রামে ছয় হাজার নতুন সদস্য যোগ দিয়েছেন।’’ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বড় মাপের প্রচারে নামতে উপত্যকার সমস্ত পঞ্চায়েতে তেরঙ্গা উত্তোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। দশ হাজার অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনীকেও সেই কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
আগামী ভোটে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়াতেও তৎপর রয়েছে বিজেপি। তাঁদের জাতীয়তাবাদের মূল স্রোতে টানার পাশাপাশি পঞ্চায়েতের মাধ্যমে রাজ্যবাসীর কাছে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দেওয়ার কাজ আগে থেকেই শুরু করেছে মোদী সরকার। রাজ্যে নির্বাচিত সরকার না-থাকায় পিডিপি বা ন্যাশনাল কনফারেন্সের মতো আঞ্চলিক দলগুলিকে সরিয়ে রেখেই সেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র। দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে কাশ্মীরিদের মন জয়ে অনেকটা সময় খরচ করেছেন মোদী।
জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে আসন পুনর্বিন্যাসের একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল বিজেপি। কারণ, জম্মুর চেয়ে কাশ্মীর অংশে বিধানসভা আসন বেশি থাকায় উপত্যকায় জয়ী দলই বরাবর রাজ্য শাসন করে এসেছে। তাই দল চাইছিল আসন পুনর্বিন্যাস হোক। কিন্তু তা বাস্তবায়িত না-হওয়ায় এখন অন্য কৌশলে হাঁটার পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি। দলের দাবি, উপত্যকার রাজনৈতিক দলগুলির উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে কাশ্মীরের মানুষ। তাই দলের পরিকল্পনা হল, কাশ্মীরে অধিকাংশ আসনে যত বেশি সংখ্যক নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানো। যাতে জয়ী নির্দল প্রার্থীরা সরকার গড়তে সাহায্য করতে পারে বিজেপিকে।