ছবি— সংগৃহীত।
মুম্বই হামলার বর্ষপূর্তি এবং ওই হামলা প্রসঙ্গে কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারির বইকে হাতিয়ার করে আজ ভোটমুখী মণিপুরে কংগ্রেসের উদ্দেশে আক্রমণ শানালেন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। আজ ইম্ফলে প্রাক্তন সেনাদের একটি সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নড্ডা দাবি করেন, ১৩ বছর আগে যখন মুম্বই হামলা হয়েছিল, তখন কেন্দ্রে ছিল মজবুর (দুর্বল) সরকার, সেখানে নরেন্দ্র মোদী সরকার গোটা দেশকে একটি মজবুত সরকার উপহার দিয়েছেন।
দুই সরকারের মধ্যে আজ তুলনা টানতে গিয়ে কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারির বইকে বেছে নিয়েছেন নড্ডা। আগামী মাসের শুরুতে মণীশের ‘টেন ফ্ল্যাশ পয়েন্টস, ২০ ইয়ারস’ বইটি প্রকাশ পেতে চলেছে। প্রকাশনা সংস্থা বইটির যে সারসংক্ষেপ দু’দিন আগে প্রকাশ করেছে, তাতে ২০০৮-এর ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ে পাক জঙ্গিদের হামলার জবাবে তৎকালীন মনমোহন সিংহ সরকারের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেছেন মণীশ। তৎকালীন কংগ্রেসের মুখপাত্র মণীশ বইয়ে লিখেছেন, সে সময়ে সামরিক পদক্ষেপ করার প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তা করেনি ইউপিএ সরকার। আজ সেই বক্তব্যকে অস্ত্র করে নড্ডা বলেন, ‘‘খোদ কংগ্রেস নেতা লিখেছেন ওই হামলার জবাব না দেওয়া ছিল তৎকালীন সরকারের অসংবেদনশীল মনোভাব। সে সময়ে ভারতীয় সেনা প্রত্যাঘাতের জন্য প্রস্তুত থাকলেও, সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারেনি। এই হল মজবুর বা দুর্বল সরকারের উদাহরণ। সেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর আমলে জঙ্গি হানার জবাবে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, এয়ার স্ট্রাইক করেছেন। এখানেই মোদীর মজবুত সরকার ও ইউপিএ জমানার মজবুর সরকারের পার্থক্য।’’ বর্তমানে মণীশ কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ জি-২৩ গোষ্ঠীর সদস্য। পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে মণীশের ওই বইটি প্রকাশ পেতে চলায় স্বভাবতই অস্বস্তিতে কংগ্রেস। আজ মণীশের ওই দাবিকে খারিজ করে দলের সমর্থনে মুখ খুলেছেন আরেক বিক্ষুব্ধ নেতা আনন্দ শর্মা। সাংবাদিক সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জি-২৩-এর অন্যতম নেতা আনন্দ বলেন, “সে সময়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং পদক্ষেপ করেছিল, তা একেবারে সঠিক ছিল।’’ মণীশের বক্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত মতামত বলে আজ বিতর্কে জল ঢালতে তৎপর ছিলেন আনন্দ। এ প্রসঙ্গে দলের আরেক মুখপাত্র পবন খেড়া বলেন, আগে বইটি প্রকাশিত হোক, তার পরে মন্তব্য করা যাবে।
মুম্বই হামলার বর্ষপূর্তির দিন বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদীও। আজ সংসদের সেন্ট্রাল হলে সংবিধান দিবসের অনুষ্ঠানে মুম্বই হামলায় নিহত নিরাপত্তাকর্মীদের স্মরণ করেন তিনি। মোদী বলেন, “মুম্বই হামলায় যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল, তা দেশ কখনও ভুলবে না। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ভারত তাই নতুন ভাবে সন্ত্রাসের মোকাবিলা করার নীতি নিয়েছে।’’ আজ মোদী সরকারের পক্ষ থেকে ইসলামাবাদের কাছে পাকিস্তানের যে নাগরিকেরা ওই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই হামলায় ১৫টি দেশের ১৬৬ জন নাগরিক মারা যান। গত ১৩ বছর ধরে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা নিহতদের পরিবারেরা দিন গুনছেন, কবে পাকিস্তানে ওই মামলার শুনানি শেষ হবে। তাঁরা আশা করছেন, দোষীদের শাস্তি হবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হল যে, ১৩ বছর পরেও মামলা শেষ হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। অথচ, সে সময়ে হামলার পরেই সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে ওই হামলার যাবতীয় পরিকল্পনা এবং তা পিছন থেকে নিয়ন্ত্রণের কাজ— সবটাই হয়েছিল পাকিস্তান থেকে। নয়াদিল্লির যুক্তি, কোনও ভাবেই দায় এড়াতে পারে না পাকিস্তান। আজ তাই দিল্লিতে নিযুক্ত পাক দূতাবাসের এক শীর্ষ পর্যায়ের আমলাকে ডেকে দ্রুত বিচার শেষ করার প্রশ্নে ‘নোট ভার্বাল’ দেয় ভারত। পরে এ বিষয়ে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, ওই ঘটনার মূল মাথারা পাকিস্তানের বাসিন্দা। বিচার দ্রুত শেষ করে দোষীদের শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার দাবি জানানো হয়েছে পাকিস্তানের কাছে। নয়াদিল্লি চায়, সন্ত্রাস দমন প্রশ্নে আন্তরিকতা দেখিয়ে ওই ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিক ইসলামাবাদ।