হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের প্রতিনিধিরা নাম বদলের দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে উপস্থিত কুতুব মিনারের সামনে। ছবি পিটিআই।
শাহজহানের তৈরি তাজমহল কোনও দিন ‘তেজো মহালয়া’ নামে মন্দির ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি তথ্য অনুসন্ধানী দল গড়ার আবেদন জানিয়ে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের লখনউ বেঞ্চে সম্প্রতি আবেদন করেছিল বিজেপি। তাজমহলের বন্ধ থাকা কক্ষগুলি খুলে তা খতিয়ে দেখারও আর্জি জানানো হয়। সেই ঘটনার রেশ কাটার আগেই এ বার শাহজহানের নামাঙ্কিত রাস্তার নাম বদলেরও দাবি জানাল বিজেপি। আবার কুতুব মিনারের নামবদল করে বিষ্ণু স্তম্ভ রাখার দাবি জানিয়ে প্রতিবাদে শামিল হয়েছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনও। বিরোধীদের অভিযোগ, দৈনন্দিন সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতেই নামবদলের কৌশল বিজেপির।
আজ মহাকাল মানব সেবা এবং আরও কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের প্রতিনিধিরা প্ল্যাকার্ড হাতে উপস্থিত হন কুতুব মিনারের সামনে। ইউনেসকো-র ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ তকমাপ্রাপ্ত এই স্থাপত্যের নামবদলের দাবিতে স্লোগানও দেওয়া হয়। হনুমান চালিসাও পাঠ করেন তাঁরা। পরিস্থিতি সামলাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় সেখানে।
দিল্লির কিছু রাস্তার নাম বদলেরও দাবি জানিয়ে আজই সরব হয়েছে দিল্লি বিজেপি। উত্তর দিল্লি পুরসভাকে চিঠি লিখে দিল্লি বিজেপির প্রধান আদেশ গুপ্ত জানিয়েছেন, শাহজহান রোড, তুঘলক রোড, আকবর রোড, আওরঙ্গজ়েব লেন, হুমায়ুন রোড-এর নাম পরিবর্তন করার সুপারিশ করেছেন। বলা হয়েছে, মোগল আমলে দাসত্বের প্রতীক স্বরূপ এই রাস্তাগুলির নাম পরিবর্তন করা হোক।
বিজেপি নেতা গুপ্তের পরামর্শ তুঘলক রোডের নাম বদলে করা হোক গুরু গোবিন্দ সিংহ মার্গ। একই ভাবে আকবর রোড, আওরঙ্গজ়েব লেন, হুমায়ুন রোড, শাহজহান রোডের নাম পরিবর্তন করে যথাক্রমে মহারানা প্রতাপ রোড, আব্দুল কালাম লেন, মহর্ষি বাল্মীকি রোড এবং জেনারেল বিপিন রাওয়ত করা হোক। এর পাশাপাশি বাবর লেনের নাম পাল্টে ক্ষুদিরাম বসুর নামে রাখার প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত ২৪ আকবর রোডে রয়েছে কংগ্রেসের সদর দফতর। রাস্তার নাম বদলের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে ১৩ সদস্যের উত্তর দিল্লি পুরসভা। নাম বদলের প্রস্তাব এলে সাধারণত প্রস্তাবিত নামটির সঙ্গে জড়িত ইতিহাস, ভাবাবেগ প্রভৃতি বিষয় বিচার করা হয়। কিন্তু উত্তর দিল্লি পুরসভায় নাম বদলকে ব্যতিক্রমী বিষয় বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে সেখানে দিল্লি বিজেপির প্রধানের আবেদন কী ভাবে দেখা হবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে একের পর এক জায়গার নামবদলের সাক্ষী থেকেছে দেশ। উত্তরপ্রদেশের ইলাহাবাদ হয়েছে প্রয়াগরাজ। রেস কোর্স রোড যেখানে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, সেখানকার নাম হয়েছে লোক কল্যাণ মার্গ। ফৈজ়াবাদ স্টেশনের নাম হয়েছে অযোধ্যা ক্যান্টনমেন্ট। মোগলসরাই জংশনের নতুন নাম পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় জংশন।
যদিও নামবদলের এই ধারার বিরোধিতা করেছেন ইতিহাসবিদরা। অনেকেরই বক্তব্য, মোগল আমল এবং ঔপনিবেশিক জমানার নাম বদলের পিছনে রয়েছে সংকীর্ণ রাজনীতি। তা ছাড়াও জনপ্রিয় কোনও এলাকার নাম কাগজে কলমে পরিবর্তন হলেও পুরনো নামটিই থেকে যায় লোকের মুখে।
বিরোধীদের অভিযোগ, এক দিকে গোটা দেশের মানুষ যখন মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার, গ্যাসের দাম হাজার পেরিয়েছে, বেকারত্বও ক্রমশ বাড়ছে, ডলারের নিরিখে দাম পড়ছে টাকার, রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রি করা হচ্ছে, সেই সময়ে দৈনন্দিন সমস্যা তথা নরেন্দ্র মোদী সরকারের ব্যর্থতা আড়াল করতেই এ ধরনের হঠকারী প্রস্তাব এনে চিরাচরিত বিভাজনের রাজনীতির পথে হাঁটছে বিজেপি।