যোগী আদিত্যনাথ, স্বপন দাশগুপ্ত। ফাইল চিত্র।
অ-বিজেপি শিবির সমালোচনা শুরু করেছিল আগেই। মাস ছয়েকের মধ্যেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। এমন একটা সময়ে বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসবে নিষেধাজ্ঞা যোগী সরকারের। প্রত্যাশিত ভাবেই বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে হাতিয়ার পেয়ে গিয়েছে তৃণমূল, বামফ্রন্ট, কংগ্রেস-সহ সব পক্ষ। বিজেপি-কে ‘বাঙালি-বিরোধী’ বলে আক্রমণ করা শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু এ বার বঙ্গ বিজেপি-ও নেমে পড়ল সে আসরে। উত্তরপ্রদেশ সরকারের জারি করা নিষেধাজ্ঞাকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিলেন বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত। বাঙালি হিন্দুরা এই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছে— টুইটারে যোগী আদিত্যনাথের উদ্দেশে এমনই লিখলেন স্বপন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৫৬ মিনিট নাগাদ টুইটটি করেছেন স্বপন। তিনি লিখেছেন, ‘‘দুর্গাপুজো ঘরে করার যে নির্দেশ উত্তরপ্রদেশ সরকার দিয়েছে, তা অন্যায় এবং অবাস্তব।’’ এতেই থামেননি স্বপন। উত্তরপ্রদেশ সরকার যে রামলীলা উদ্যাপনের অনুমতি দিয়েছিল, সে কথাও টুইটে মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। স্বপন লিখেছেন, ‘‘যে ভাবে রামলীলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, সে ভাবেই কঠোর অথচ সংবেদনশীল বিধিনিষেধ আরোপ করে দুর্গাপুজোর অনুমতিও দেওয়া উচিত। না দিলে সেটা বৈষম্যমূলক হবে।’’ উত্তরপ্রদেশে বসবাসকারী বাঙালি হিন্দুদের হয়েই যে তিনি মুখ খুলছেন, স্বপন সে কথাও বুঝিয়ে দিয়েছেন। টুইটের শেষ লাইনে তিনি লিখেছেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের বাঙালি হিন্দুরা যোগী আদিত্যনাথের কাছে এই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাচ্ছে।’’
স্বপনের এই টুইটকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নব্বই দশকের শুরু থেকে রাজনীতিতে রয়েছেন তিনি। সে যুগেও বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এখনও তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের প্রিয়পাত্র। বেফাঁস মন্তব্য বা দলকে অস্বস্তিতে ফেলা কার্যকলাপের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে খুব একটা ওঠে না। এ হেন স্বপন যে ভাবে যোগী সরকারের নির্দেশের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন, তা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর জন্যও ইঙ্গিতবহ বলে একটি মহলের দাবি।
আরও পড়ুন: অবশেষে কাল বাবরি মসজিদ মামলার রায়, চার নজরে ২৮ বছর
করোনার সংক্রমণ এখনও কাটেনি, সুতরাং এ বছর প্যান্ডেল বেঁধে দুর্গাপুজো করা যাবে না, পুজো করতে চাইলে বাড়িতে করতে হবে— এই রকমই নির্দেশ জারি করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। উত্তরপ্রদেশে থাকা বাঙালিদের মধ্যে এই নির্দেশ যতটা প্রভাব ফেলেছে, পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু প্রভাব তার চেয়ে খুব কম নয়। ২০২১-এ বঙ্গবিজয় যখন মোদী-শাহ-নড্ডাদের পাখির চোখ, তখন দলের গায়ে ‘বাঙালি বিরোধী’ তকমা লাগুক, এটা বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব একেবারেই চাইছেন না। তাই বাংলায় তৃণমূল, কংগ্রেস বা বামেরা যখন এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে যোগী সরকারকে আক্রমণ শুরু করেছে, তখন স্বপনের টুইটের মাধ্যমে বিজেপি-ও সেই তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলতে চাইল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মত। বাঙালির আবেগে যদি ধাক্কা লেগে থাকে, তা হলে সে ধাক্কা উত্তরপ্রদেশের সরকার দিয়েছে, বিজেপি দেয়নি— স্বপন দাশগুপ্তের টুইটের মাধ্যমে এই বার্তাই দিতে চাওয়া হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
আরও পড়ুন: শেষ গম্বুজটাও ভেঙে পড়তে দেখলাম ৪টে ৪৯ মিনিটে
অ-বিজেপি শিবির কিন্তু তাতেও অস্ত্র হাতছাড়া করতে রাজি নয়। উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সরব হয়েছেন উত্তরপ্রদেশেরই এক কংগ্রেস নেতা— জিতিন প্রসাদ। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতিন এখন পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক। স্বপন দাশগুপ্তর টুইটটিকে রিটুইট করে জিতিন লিখেছেন, ‘‘মধ্যপ্রদেশে বিশাল বিশাল রাজনৈতিক জনসভার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সেই একই বিজেপি-র সরকার উত্তরপ্রদেশে বাঙালি সম্প্রদায়কে বিধিনিষেধ মেনে দুর্গাপুজো করার অনুমতি দিচ্ছে না।’’ রাজনৈতিক লাভের বাইরে বিজেপি কিছুই বোঝে না বলেও লিখেছেন তিনি।
তবে স্বপন দাশগুপ্তের টুইটের পরে পরিস্থিতি বদলাতে পারে বলে বঙ্গ বিজেপির একাংশ মনে করছে। শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন না নিয়ে স্বপন দাশগুপ্ত এই টুইট করেননি, মনে করছেন তাঁরা। এর পরে যদি উত্তরপ্রদেশ সরকার বিধিনিষেধ কিছুটা আলগা করে, তা হলে সেটাকে বিজেপি-র চেষ্টার ফসল বলেই দেখানোর চেষ্টা হবে। স্বপনের কৌশলী টুইটের অবশ্য আরও একটা দিক রয়েছে। সেটা মেরুকরণের দিক। বিভিন্ন অ-বিজেপি দল যখন বাঙালির আবেগ নিয়ে কথা বলছে, তখন স্বপন দাশগুপ্ত কিন্তু সে পথে হাঁটেননি। তিনি বাঙালি হিন্দুর আবেগের কথা বলেছেন। বিধানসভা নির্বাচনের দিকে চোখ রেখে বিজেপি নিজেদের খাতে বওয়াতে চাইছে রাজনীতির হাওয়াকে, টুইটারে স্বপনের শব্দচয়ন থেকে তা অনেকটা স্পষ্ট বলে রাজনৈতিক শিবিরের মত।