ছবি: পিটিআই।
আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত অক্টোবরের গোড়াতেই বলেছিলেন, ‘‘ভারত হিন্দুরাষ্ট্র। যত ক্ষণ এক জনও ভারতকে মাতৃভূমি এবং নিজেকে হিন্দু বলে মনে করবেন, এই দেশ হিন্দুরাষ্ট্র থাকবে।’’ আর আজ সকালে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভা যখন সবে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অনুমোদন করেছে, সংসদ চত্বরে বিজেপি সাংসদদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো।
একের পর এক বিজেপি সাংসদ ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, ‘‘বাংলাদেশ-পাকিস্তান-আফগানিস্তান ইসলামি দেশ। ভারতেরও নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতির পরিচয় থাকা উচিত।’’ সে কারণেই কি শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের বিল আসছে? ‘‘না, না, তা কেন? ভারত তো ধর্মনিরপেক্ষ দেশ’’—এমনই যুক্তি দিচ্ছিলেন নেতারা। কিন্তু মনের কথা বলে ফেললেন গোরক্ষপুরের সাংসদ।
যোগী আদিত্যনাথের কেন্দ্র থেকে সাংসদ হওয়া রবি কিষণের মুখ থেকে বেরিয়েই পড়ল, ‘‘এ দেশে ১০০ কোটি হিন্দু। ভারত হিন্দু রাষ্ট্র। বিশ্বে অনেক ইসলামি ও খ্রিস্টান দেশ আছে। ফলে ভারতেরও নিজস্ব পরিচয় দরকার।’’ কংগ্রেসের শশী তারুরেরা তখন বলছেন, বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করতে চাইছে। আর বিজেপির সাংসদ রমেশ বিধুরি জবাব দিচ্ছেন, ‘‘যাঁরা এই বিলের বিরোধিতা করবেন, তাঁদের মুখোশ খুলে যাবে। অনুপ্রবেশকারীদের দেশে রেখে কারা উন্নয়ন রুখতে চায়, স্পষ্ট হবে।’’ তাই বলে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন? বিজেপি সাংসদের মত, ‘‘গাঁধীর আদর্শে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রেখে।’’
আরও পড়ুন: অ্যাকাউন্ট ফাঁকের চক্রে প্রযুক্তিশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা, পুলিশকে খাবি খাওয়াচ্ছে ‘জামতাড়া গ্যাং’
যদিও আরএসএসের ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ তৈরির পথেই যে হাঁটছেন মোদী-শাহ, বিরোধীদের তা নিয়ে সংশয় নেই। এমআইএম-এর নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বলেন, ‘‘এই আইন আনার অর্থ ভারতকে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র তৈরি করা, দ্বিজাতি তত্ত্বকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। ভারতীয় মুসলিম হিসেবে জিন্নার এই তত্ত্ব খারিজ করি।’’
বিজেপি সাংসদদের গত কালই শেখানো হয়েছে, নাগরিকত্ব বিল কী লক্ষ্যে আনা হচ্ছে? সেখানে দলের নেতা বা অধিকাংশ সাংসদ এই বার্তা পেয়েছেন, সঙ্ঘের ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ পথেই হাঁটছে বিজেপি। এ দেশের সব নাগরিককেই ‘হিন্দু’ বলে মনে করে সঙ্ঘ। কেউ যদি নিজেকে ‘হিন্দু নন’ বলে মনে করেন, তাঁদেরও ‘হিন্দু’ বলেই মনে করে সঙ্ঘ। বিজেপির এক নেতার মতে, ‘‘নাগরিকত্ব বিল পাশের পর অ-মুসলিমরা নাগরিক হবেন। জাতীয় নাগরিক পঞ্জিতে চিহ্নিত করা হবে অনুপ্রবেশকারীদের। এর পরেই ষোল কলা পূর্ণ।’’