প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে দলের সাংসদের অপশব্দের নিন্দা দূরের কথা। বিজেপি তার বদলে যুক্তি দিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে টিপ্পনী শুনেই বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরি লোকসভায় সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছিলেন। বিজেপি প্রশ্ন তুলল, প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে যখন বিরোধীরা অপশব্দ ব্যবহার করেন, তার বেলা কী হয়?
বৃহস্পতিবার লোকসভায় দাঁড়িয়ে দক্ষিণ দিল্লির বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরি বিএসপি সাংসদ কুঁয়র দানিশ আলিকে কুৎসিত ভাষায় নিন্দা করেছিলেন। তাঁর মুসলিম পরিচিতি নিয়ে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছিলেন। তারপরে ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও বিজেপির কোনও নেতা বিধুরির মন্তব্যের নিন্দা করেননি। একমাত্র রাজনাথ সিংহ সে দিনই লোকসভায় দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন। বিধুরি নিজেও দুঃখপ্রকাশ করেননি। বিধুরির বিরুদ্ধে সাংসদের অধিকার ভঙ্গের প্রক্রিয়া শুরু করার আর্জি জানিয়ে দানিশ আলির চিঠি, বিরোধী সাংসদদের বিধুরির বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির দাবি সত্ত্বেও লোকসভায় স্পিকার ওম বিড়লা বিধুরিকে সতর্ক করা ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আর কোনও ব্যবস্থা নেননি।
উল্টে আজ বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে স্পিকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, দানিশ আলির অপশব্দ ও আচরণের তদন্ত করা উচিত। চন্দ্রযানের সাফল্য নিয়ে আলোচনায় বিধুরির বক্তৃতার সময়ে তিনিও বসে বসে টিপ্পনি করছিলেন। দুবে অবশ্য বলেছেন, বিধুরির বক্তব্যকে কোনও সভ্য সমাজ সঠিক বলতে পারে না। কিন্তু বিজেপি সাংসদদের অভিযোগ, দানিশ প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে টিপ্পনী করেছিলেন। বিরোধী শিবিরের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে টিপ্পনীর জবাবে সংখ্যালঘু পরিচয় তুলে কেন নিশানা করা হবে? বিধুরির কথায় আসলে বিজেপি-আরএসএসের মুসলিমদের সম্পর্কে মনোভাব ফুটে উঠেছে বলে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের অভিযোগ।
এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে জানিয়েছেন, এনসিপি, তৃণমূল, ডিএমকে বিধুরির বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের অভিযোগে শাস্তির দাবি জানিয়ে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছে। বিধুরি এর আগে ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝিকে হেনস্থা করেছিলেন। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ এস টি হাসানের অভিযোগ, বিধুরি অতীতে তাঁকে মুসলিম বলে নিশানা করেছেন। তাঁকে পাকিস্তান চলে যেতে বলেছেন। আজ যুব কংগ্রেস দিল্লির লোদী এস্টেটে বিধুরির সরকারি বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। তাঁর ইস্তফার দাবি তুলেছে। বিধুরি অবশ্য তাঁর মন্তব্যের জন্য কোনও রকম দুঃখপ্রকাশ করেননি।
বিধুরি নিয়ে চাপের মুখে বিজেপি আজ হরিয়ানার কংগ্রেস নেতা উদয় ভানের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে অপশব্দ প্রয়োগের অভিযোগ তুলেছে। বিজেপি সাংসদ সুধাংশু ত্রিবেদীর বক্তব্য, পরিকল্পিত ভাবে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে অপশব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিধুরির অপশব্দ নিয়ে ত্রিবেদীর জবাব, ‘‘আমাদের সাংসদ অপশব্দ বলেছেন বলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ দুঃখপ্রকাশ করেছেন। আমাদের দল বিধুরিকে শো-কজ় করে নোটিস জারি করেছে। হরিয়ানায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি উদয় ভান প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কুকথা বললেও তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়নি।’’ উদয় ভান এ দিন যুক্তি দিয়েছেন, তিনি যা বলেছেন, তা হরিয়ানার চলতি ভাষা।