লোকসভায় অনাস্থা বিতর্কে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। ছবি: পিটিআই।
গা জোয়ারি করে দেওঘর বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলে সপুত্র ঢুকে পড়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর-ও করেছিলেন। ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার সেই বিতর্কিত বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবেকে দিয়েই নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের বিতর্কের সূচনা করাল বিজেপি।
গত ২৬ জুলাই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের নোটিস জমা দিয়েছিলেন অসমের কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ। সংসদীয় রীতি মেনে তিনিই প্রথম বিতর্কের সূচনা করেন। এর পরে সরকারপক্ষের প্রথম বক্তা হিসাবে বলতে শুরু করেই বিরোধীদের নিশানা করেন নিশিকান্ত। বলেন, ‘‘ইন্ডিয়া’র যত জন সাংসদ রয়েছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন, তাঁদের মধ্যে মাত্র কয়েক জনই এর পুরো নাম বলতে পারবেন। এটা কোনও অনাস্থা ভোট নয়। এটা আসলে বিরোধীদের আস্থা পরীক্ষার ভোট। বিরোধীরা আসলে দেখতে চান, কে কে তাঁদের সমর্থন করছেন। বিরোধীরা নিজেদের মধ্যেই লড়াই করছেন।’’
মোদী পদবি মামলায় সুরাত আদালতের রায়ে সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের পরে সোমবার লোকসভায় সাংসদ পদ ফিরে পেয়েছেন রাহুল গান্ধী। সে প্রসঙ্গে কটাক্ষ করে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট কোনও রায় দেয়নি। স্থগিতাদেশ দিয়েছে। উনি (রাহুল) বলছেন ক্ষমা চাইবেন না। বলেছেন ‘আমি সাভারকর নই’। আপনি কখনওই সাভারকর হতে পারবেন না।’’ এর পরেই সনিয়া গান্ধীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন তিনি। নিশিকান্ত বলেন, ‘‘সনিয়া এক জন আদর্শ ভারতীয় নারীর মতোই নিজের ছেলে-জামাইকে আগলে রাখছেন।’’ তাঁর এই মন্তব্যের পরেই বিরোধীরা সাংসদেরা সমস্বরে প্রতিবাদ জানান। যার জেরে কিছু ক্ষণ সভায় অশান্তি হয়।
প্রসঙ্গত, গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিশিকান্ত-সহ ন’জন বিজেপি সাংসদ জোর করে দেওঘর বিমানবন্দরের ‘এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল’-এ ঢুকে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের হুমকি দিয়ে রাতে চার্টার্ড বিমানের উড়ানের অনুমতি দিতে বাধ্য করেছিলেন বলে অভিযোগ। বিমানবন্দরের ডিএসপি সুমন আমনের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছিল। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। ২০০৯ থেকে টানা তিনটি লোকসভা ভোটে গোড্ডা থেকে নির্বাচিত নিশিকান্ত তাঁর নির্বাচনী হলফনামার সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত যে নথিগুলি পেশ করেছিলেন, তার প্রতিলিপি এবং এ সংক্রান্ত নথি টুইটারে পোস্ট করে গত মার্চ মাসে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র অভিযোগ করেছিলেন, ওই বিজেপি সাংসদের পিএইডি এবং এমবিএ ডিগ্রি জাল!
প্রকাশ্যে বিতর্কিত মন্তব্যেরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে নিশিকান্তের বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের প্রচারের সময় ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ায় বিজেপির একটি সভায় তিনি শ্রোতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘আপনাদের অনুরোধ বিজেপি প্রার্থী চোর-ডাকাত বা দুষ্ট লোক হলেও তাঁকে সমর্থন করুন।’’ সোমবার লোকসভায় কংগ্রেস সাংসদ রাহুল এবং সিপিএম নেতা প্রকাশ কারাটের বিরুদ্ধে চিনা সংস্থার থেকে মদত নেওয়ার অভিযোগও তুলেছিলেন তিনি। বিরোধীদের আপত্তির জেরে সভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হয় সেই মন্তব্য।