ইডি-র দফতর থেকে বেরোনোর পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি পিটিআই।
বিজেপি থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে চাইলে বিধায়কদের ইস্তফা দিয়ে ভোটে জিতে আসতে হবে, এমন নীতির কথা শোনালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দাবি, বিজেপি থেকে ২৫ জন বিধায়ক তাঁদের দলে আসার জন্য লাইন দিয়ে আছেন। তবে তাঁদের ইস্তফা দিয়ে আসতে হবে, এমনই শর্তের কথা বলেছেন অভিষেক। রাজ্যে বিধানসভা ভোটের কয়েক মাসের মধ্যেই এখনও পর্যন্ত চার জন বিজেপি বিধায়ক যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। তাঁরা কেউই বিধায়ক-পদে ইস্তফা দেননি। তারও আগে ১০ বছর ধরে বিগত দুই তৃণমূল সরকারের আমলে কংগ্রেস বা বামফ্রন্ট থেকে যে বিধায়কদের দলে নেওয়া হয়েছে, আইনত বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্র ছাড়া কাউকেই বিধায়ক-পদ ছাড়তে দেখা যায়নি। অভিষেকের মন্তব্যকে তাই তৃণমূলের নীতির প্রশ্নে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
দিল্লিতে সোমবার ইডি-র দফতরে হাজিরা দিয়ে বেরিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘অমিত শাহ বলেছিলেন, তাঁর বাল্যবয়স থেকে অভিজ্ঞতা। বাংলায় ২০০টা আসন জিতবেন। ৭০-এর ঘরে এসে আটকে গিয়েছে! এখন ২৫ জন বিধায়ক লাইনে রয়েছেন। আমরা নিচ্ছি না। বিজেপি থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁরা ইস্তফা দিয়ে নির্বাচন লড়বেন। জিতে আসবেন।’’ মামলা বা তদন্তকারী সংস্থার ভয়ে মাথা না ঝুঁকিয়ে তৃণমূলই ভিন্ রাজ্যে এবং ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেও বিজেপিকে পরাস্ত করবে বলে তাঁর দাবি।
দলত্যাগ প্রসঙ্গে অভিষেকের মন্তব্য নিয়ে স্বভাবতই প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, কিছু দিন আগেই বিজেপি থেকে নিয়ে এসে মুকুল রায়কে পদত্যাগ তো করানো হয়ইনি, বরং পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘২১৩টা আসন পাওয়া একটা দলের সর্বময় কর্তার এই বক্তব্যই প্রমাণ করে জিতেও তাঁরা কতটা হতাশা, আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তায় রয়েছেন! সময় শক্তিশালী, সময়ই তাঁর এই দাবির অসারতা প্রমাণ করবে।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘এ সব কথা শুনতে ভাল! কিন্তু তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে কংগ্রেস এবং অন্যান্য দল থেকে লাগাতার বিধায়ক ভাঙিয়ে চলেছে। এখনও যে বিধায়কেরা সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা পকেটে বিজেপির প্রতীক নিয়েই গিয়েছেন। পদত্যাগ করে যাওয়ার দাবি আমরা বহু দিন ধরে করেছি, তৃণমূল কানে তোলেনি।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘ভূতের মুখে রাম নাম না রামের মুখে ভূতের নাম, কী বলব জানি না! এত দিন ধরে যাঁরা দলত্যাগ করে তৃণমূলে গিয়েছেন, তাঁরা বহাল তবিয়তে বিধায়ক রয়ে গিয়েছেন। এই কথা মানতে হলে মুকুল রায়কে আগে পদত্যাগ করান!’’