ফাইল চিত্র।
ইউক্রেনে আটকে পড়া পড়ুয়ারা কোনও সাহায্য না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেই গত কয়েকদিন ধরে তাঁদের ফেসবুক-টুইটারে কটাক্ষের মুখে পড়তে হচ্ছিল। আজ খোদ নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে যাওয়া পড়ুয়াদের তীব্র কটাক্ষের সুরে বলেছেন, যাঁরা বিদেশে পড়তে যান, তাঁদের ৯০ শতাংশ এ দেশে ডাক্তারি করার যোগ্যতা নির্ধারক পরীক্ষায় ফেল করেন।
কেন ভারতের ছেলেমেয়েদের বিদেশে ডাক্তারি পড়তে যেতে হচ্ছে, সে প্রশ্নের জবাব অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী দিতে চাননি। প্রহ্লাদ কেন্দ্রের সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী। কর্নাটকের বিজেপি নেতা। আজ ইউক্রেনে কর্নাটক থেকেই ডাক্তারি পড়তে যাওয়া ২১ বছরের ছাত্র নবীন শেখরাপ্পা নিহত হয়েছেন। তার পরেও জোশীর এই মন্তব্যে বিরোধীরা মোদী সরকারের মানসিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘মোদী সরকার প্রায় ২০ হাজার পড়ুয়াকে তাঁদের নিজেদের দায়িত্বে ছেড়ে দিয়েছে। দায়িত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে এখন ইউক্রেনে যাওয়া পড়ুয়াদের উপরে রাগ দেখাচ্ছেন। এটা লজ্জাজনক। এই অসংবেদনশীলতা ক্ষমতার অহঙ্কারের পরিচয়। প্রহ্লাদ জোশীর উচিত পড়ুয়া ও তাঁদের পরিবারের কাছে ক্ষমা চাওয়া।’’
সরকারি হিসেবে, এই মূহূর্তে ইউক্রেনে ভারতের ১৮,০৯৫ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছেন। ইউক্রেনে পড়তে যাওয়া বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে চার ভাগের এক ভাগই ভারতীয়। কেন এত বিপুল সংখ্যক ছেলেমেয়ে ইউক্রেনে পড়তে যাচ্ছেন?
অভিভাবকেরা বলছেন, এ দেশে যথেষ্ট সংখ্যক মেডিক্যাল কলেজ নেই। ফলে নিট বা ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষায় পিছনের সারিতে থাকলে বেসরকারি কলেজে পড়তে হয়। অখ্যাত বেসরকারি কলেজেও ডাক্তারি পড়তে ৮০ লক্ষ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হয়ে যায়। অথচ ইউক্রেনে ৩৫ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। নিয়মমাফিক বিদেশে ডাক্তারি পড়ে এলে, এ দেশে ডাক্তারি করারর জন্য এফএমজিই (ফরেন মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েটস এগজামিনেশন)-এ বসতে হয়। তাতে অনেকেই উতরোতে পারেন না সে কথাও সত্যি। কিন্তু ডাক্তারি করার লাইসেন্স থাকায় একবার না হলেও দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় অনেকে উতরে যান। তা ছাড়া এ দেশের মতো ইউক্রেনে কোনও প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসতে হয় না। ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করাটাও সুবিধাজনক। কোনও বিদেশি ভাষাও শিখতে হয় না।
ইউক্রেনের সঙ্কটের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বেসরকারি ক্ষেত্রকে এগিয়ে এসে আরও মেডিক্যাল কলেজ তৈরির কথা বলেছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে কোনও সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ, বেসরকারি কলেজগুলি বিপুল অঙ্কের ফি আদায় করবে। ফলে পড়ুয়ারা কম খরচে বিদেশে পড়তে যাবেন। দেশে প্রায় ৫৫৮টি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ২৮৯টি সরকারি কলেজ। বাকিগুলি বেসরকারি। এমবিবিএস-এ প্রায় ৮৩ হাজার আসন রয়েছে। পিজি-তে আসনের সংখ্যা ৪২ হাজারের বেশি।