ফাইল চিত্র
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে টালমাটাল হয়ে পড়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাবমূর্তি। সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে হার। প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর সার্বিক ভাবমূর্তি নিয়ে। সামনেই উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন। এই আবহে আজ প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তির টোল মেরামতে তাঁর জন্মদিনকে হাতিয়ার করে মাঠে নামল বিজেপি নেতৃত্ব। আমজনতাকে টিকাকরণে উৎসাহ দেওয়া থেকে রক্তদান শিবিরের আয়োজন, মোদীর জীবন ঘিরে প্রদর্শনী, গাছের চারা পোঁতা, অনাথ শিশুদের খাওয়ানোয় যখন আজ গোটা দিন ব্যস্ত থেকেছেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা তখন প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনকে এক যোগে বেকারত্ব দিবস, কৃষক-বিরোধী দিবস, মূল্যবৃদ্ধি দিবস, মুনাফাখোর শিল্পপতিদের বন্ধু দিবস, করোনা অব্যবস্থা দিবস হিসাবে পালন করে কংগ্রেস দিনের শেষে অস্বস্তিতে ফেলে দেয় বিজেপিকে।
আজ ৭১ বছর পূর্ণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী ৭ অক্টোবর প্রশাসক হিসাবে ২০ বছরে পা দেবেন তিনি। মোদীর জন্মদিন ও প্রশাসক হিসাবে অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে আজ থেকে ২০ দিনের বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দল। যে অভিযানের সূচনা হয় আজ থেকে। বিজেপি এর নাম দিয়েছে ‘সেবা ও সমর্পণ অভিযান’। দলের সাংসদ তেজস্বী সূর্যের কথায়, বিশ্বের ইতিহাসে এত বড় জননেতা অতীতে আর্বিভূত হননি। তাই দেশ জুড়ে বিশেষ অভিযান। এতে স্বচ্ছতা অভিযান, রক্তদান শিবির ছাড়াও বিজেপির বিভিন্ন বুথ পর্যায় থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে পাঁচ কোটি পোস্টকার্ড পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর নাম লেখা রেশন ব্যাগ বিতরণ শুরু হয়েছে রেশন দোকান থেকে। করোনার সময়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগেই যে সাধারণ মানুষ বিনামূল্যে দু’বেলা খাবার পাচ্ছেন, তা মনে করিয়ে দিতেই রেশনের থলে বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল।
আজ দিল্লিতে ২০ দিনের অভিযানের উদ্বোধন করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। কর্মীদের তিনি বলেন, “এটা দল ও দেশের গর্বের বিষয় যে আমাদের নেতা নরেন্দ্র মোদী। যিনি তাঁর গোটা জীবন দেশকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধশালী করতে উৎসর্গ করেছেন।” নড্ডার দাবি, অতীতে এ দেশে যে জাতপাত, তোষণ ও পক্ষপাতিত্বের নামে রাজনীতি হত, সেই ধারা এক ধাক্কায় পাল্টে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিবর্তে এখন ভোট হয় উন্নয়নের প্রশ্নে। সমস্ত রাজনৈতিক দল প্রধানমন্ত্রীর কারণে এখন উন্নয়নের কথা বলে ভোট চাইতে বাধ্য হয়। নড্ডার কথায়, “প্রধানমন্ত্রী হিসাবে গত সাত বছরে রাম মন্দির নির্মাণ, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা প্রত্যাহার, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প, তিন তালাক প্রথা বাতিল, সার্জিকাল স্ট্রাইকের মতো যে সিদ্ধান্তগুলি তিনি নিয়েছেন, তা অতীতে করা অসম্ভব বলে মনে হত। অতীতের প্রধানমন্ত্রীরা সাহস পেতেন না। মোদীজি পেরেছেন।’’
আজ দলীয় নেতারা ছাড়াও বিরোধী কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জ্জুন খড়্গে, শশী তারুর, শিবসেনা সঞ্জয় রাউত, তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেন প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে দেশ জুড়ে টিকাকরণ কর্মসূচি পালন করে বিজেপি কর্মী। দিনের শেষে দেখা গিয়েছে আজ সারা দিনে ২.২৪ কোটি টিকা নিয়েছেন মানুষ। বারাণসী গঙ্গার ঘাটে প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। পটনায় সাঁই মন্দিরে প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিশেষ পুজোপাঠ করতে দেখা যায় সদ্য মন্ত্রিত্ব হারানো বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদকে।
রাহুল গাঁধী প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানালেও, পাল্টা আক্রমণ শানাতে ছাড়েনি কংগ্রেস। দেশের বেকারত্ব গত এক বছরে ২.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০.৩ শতাংশ হয়েছে, ওই যুক্তিতে আজকের দিনটি জাতীয় বেকার দিবস হিসাবে পালন করে যুব কংগ্রেস। আজ রাহুল নিজের টুইটে কেবল ‘শুভ জন্মদিন মোদীজি’ লিখেছিলেন। কেন রাহুল ছোট্ট টুইট করলেন, তা নিয়ে সরব হন মোদী ভক্তরা। তাঁদের কটাক্ষ— কংগ্রেস যখন মোদীর জন্মদিনকে বেকারত্ব দিবস হিসাবে পালন করছে, তখন রাহুলের আর শুভেচ্ছা জানানোর প্রয়োজন ছিল না! তবে শুধু বেকারত্ব দিবসই নয়, একই সঙ্গে কৃষক-বিরোধী দিবস, মূল্যবৃদ্ধি দিবস মুনাফাখোর শিল্পপতিদের বন্ধু দিবস, করোনা অব্যবস্থা দিবস হিসাবেও দিনটি পালন করে কংগ্রেস। মোদী সরকারের নীতির বিরুদ্ধে পথে নামে কংগ্রেসের মহিলা মোর্চাও।