নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
অঝোর বৃষ্টি সমুদ্র সৈকতে। বিজেপির তাবড় নেতারা হাজির গোয়াতে। নেই শুধু লালকৃষ্ণ আডবাণী। দিল্লি থেকে তাঁর ব্লগ এল। কিন্তু সেটি কমল হাসনের ‘বিশ্বরূপম’ সিনেমা নিয়ে। যদিও সেই ব্লগেই সুকৌশলে উল্লেখ হিটলার আর মুসোলিনির প্রসঙ্গ। বুঝতে কারও অসুবিধা হল না, আডবাণীর কটাক্ষ কার দিকে?
২০১৩ সালের জুন মাসের ঘটনা। বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক চলছিল গোয়াতে। বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পরের বছর লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার প্রথম ধাপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ‘প্রথম ধাপ’ বলতে লোকসভা নির্বাচনে প্রচার কমিটির প্রধান ঘোষণা করা মোদীকে।
কিন্তু ঘোরতর আপত্তি আডবাণীর। তাঁর ঘনিষ্ঠ নেত্রী সুষমা স্বরাজেরও। আপত্তি থাকলেও রাজনাথ সিংহ, অরুণ জেটলিরা বুঝতে পেরেছিলেন, আর রোখা যাবে না মোদীকে। তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী করার জন্য কর্মীদের থেকেও প্রবল চাপ আসছে।
হালেই প্রয়াত হয়েছেন সুষমা স্বরাজ। মাস কয়েক আগে আডবাণীর আর এক অনুগামী অনন্ত কুমারেরও মৃত্যু হয়েছে। প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকরেরও প্রয়াণ হয় রোগভোগের পর। রাহুল গাঁধী যাঁর সম্পর্কে বলতেন, রাফাল ফাইলের ‘আসল সত্য’ তিনি জানতেন। এরই মধ্যে সঙ্কটজনক অবস্থায় প্রায় দশদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি অরুণ জেটলি। অসুস্থতার জন্য মন্ত্রীও হননি। রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী, অমিত শাহ থেকে রাজনাথ সিংহ, অরবিন্দ কেজরীবাল-মায়াবতী-জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মতো বিরোধী নেতারাও হাসপাতালে দেখা করে আসছেন জেটলির সঙ্গে। আর নব্বই পার করা আডবাণীও আর রাজনীতিতে সক্রিয় নন। মোদী-শাহ জুটি আসার পর এমনিতেই তিনি ‘মার্গদর্শক মণ্ডলী’তে। যার কোনও বৈঠকও হয়নি আজ পর্যন্ত।
বিজেপিতে অনেকেরই আক্ষেপ, নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ এখন প্রবল ক্ষমতাধর। কিন্তু দলে যে নেতারা তাঁদের বিরুদ্ধে অন্তত আওয়াজ তুলতে পারতেন, তাঁদের অনেকেই সদ্য প্রয়াত হয়েছেন অথবা রাজনীতিতে সক্রিয় নন। বিজেপি তিনশোর বেশি আসন নিয়ে আসার পর ধাক্কার রেশ কাটিয়ে বিরোধীরাও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। আর বিজেপি নেতৃত্বও এখন বিরোধীশূন্য একটি রাজনৈতিক পরিস্থিতির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন। বিজেপির এক নেতার মন্তব্য, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি, তাতে ঘরে-বাইরে বিরোধ শেষ হওয়া গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয়।’’
সুষমা স্বরাজের স্মরণসভাতে খোদ প্রধানমন্ত্রীই একটি ঘটনার উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রথম বার বক্তৃতা দেওয়ার আগে তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সুষমাকে মোদী বলেছিলেন, মন থেকেই বক্তৃতা দেবেন তিনি। কিন্তু সুষমা বলেন, ‘‘এ ভাবে হয় না ভাই। সব মঞ্চের এক একটি নিয়ম আছে।’’ খোদ মোদীই এ কথা সকলকে শুনিয়ে বলেন, সত্যটা মুখের উপর এমন অকপটে বলতে পারতেন সুষমা। কিন্তু বিজেপিরই এক নেতা বলেন, ‘‘এখন রাজনাথ সিংহ ছাড়া দলের মধ্যে এমন কথা বলার আর কে আছেন? দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর তাঁর হাত থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার পর রাজনাথ ফোঁস করে উঠেছিলেন।’’
মোদী-শাহের জুটির কাছে রাজনাথও কী বেশি দিন এই মেজাজ ধরে রাখতে পারবেন?