প্রতীকী ছবি।
সকাল থেকে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরা নয়। বরং বাজার বা চৌরাস্তার মতো জমজমাট এলাকা দেখে বসে পড়ছেন নেতা তথা প্রার্থী। সঙ্গীদের বয়ে আনা উপকরণ দিয়ে টপাটপ ভেজে চলেছেন পুরী-পকোড়া। ইলাহাবাদের জমজমাট রাস্তা-বাজারের ধারে বিনে পয়সায় সে সব গরমাগরম খেয়ে পথচলতি জনতা খুশ। খুশ সঙ্গের কর্মীরাও। ঘনঘন ‘জিন্দাবাদ’ ধ্বনি উঠছে নেতার নামে। তারই ফাঁকে ফাঁকে প্রচারটাও সেরে নিচ্ছেন প্রার্থী।
তিনি উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। ইলাহাবাদ পশ্চিম কেন্দ্রে এ বারও বিজেপির প্রার্থী।
অবশ্য সিদ্ধার্থনাথ সিংহ একা নন। ইলাহাবাদ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক তথা ওই কেন্দ্রের এ বারের প্রার্থী নন্দ গোপাল গুপ্তও একই পথে হাঁটছেন। পুরী-পকোড়ার সঙ্গে চা-ও তৈরি করে বিলি করছেন দিব্যি।
পুরী-পকোড়া ভাজার সঙ্গে সঙ্গে চলছে ভোটের প্রচার। এবং অবশ্যই একটা বার্তা দেওয়া— বেকারত্ব নিয়ে বিরোধীরা যা বলছেন, তা সত্যি নয়।
উত্তরপ্রদেশের এ বারের ভোটে আরও একাধিক বিষয়ের সঙ্গে বিজেপির বড় সমস্যা হল, বেকারত্ব নিয়ে রাজ্যের দুই বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেসের লাগাতার প্রচার। প্রচারে নেমে বিরোধীরা বলছেন, সাত বছর আগে নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলেই বছরে ২ কোটি চাকরির বন্দোবস্ত হবে। তা হয়নি। উল্টে নরেন্দ্র মোদীর জমানায় নোটবাতিল আর করোনার থাবায় চাকরি হারিয়েছেন কয়েক কোটি মানুষ। দেশে বেকারত্বের হার গত ৪৭ বছরে সর্বোচ্চ। মোদী সরকারেরই হিসেব বলছে, স্নাতকদের ৬০ শতাংশেরও বেশি বেকার। যদিও বেকারত্ব নিয়ে এত ভাবতে নারাজ প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন, পকোড়া ভাজাও একটা শিল্প। তাই যাঁরা পকোড়া বিক্রি করেন, তাঁদের বেকার বলা যাবে না।
ভোটের প্রচারে সরকারের দেওয়া তথ্যকে হাতিয়ার করেই বেকার যুব সমাজের মন পেতে আসরে নেমেছেন বিরোধীরা। আর চাপের মুখে বেকারদের মন জিততে মোদীর ‘পরামর্শ’কে হাতে-কলমে প্রয়োগ করে ইলাহাবাদের দুই বিজেপি প্রার্থী বোঝাচ্ছেন, পকোড়া ভাজাও কর্মসংস্থান। তা ছাড়া, যোগী সরকারের আমলে অনেক চাকরিও হয়েছে। পকোড়া ভেজে বিজেপির এই প্রচারকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস বলছে, ‘পকোড়া-পলিটিক্স’ করে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে বিজেপি।
যোগী সরকারের মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পমন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিংহের দাবি, তাঁদের দেওয়া চাকরির তথ্য অস্বীকার করছেন না বিরোধীরা। তা ছাড়া তাঁদের জমানায় কত লোককে ব্যবসার জন্য ঋণ দেওয়া হয়েছে, সে সবও প্রচারে তুলছেন বিজেপির প্রার্থী-নেতারা। কিন্তু বেকারত্ব নিয়ে বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণ তাতে থামছে না।
রাত পোহালেই ভোট ইলাহাবাদে। কাল আর রাস্তার মোড়ে পকোড়া ভেজে বিলোবেন না দুই প্রার্থীর কেউই। কিন্তু প্রচারে বেরিয়ে তাঁদের পকোড়া ভাজা আদৌ বেকারদের মন জিতল কি না, তার পরীক্ষা হবে আগামিকালই।