অতীতেও বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। ফাইল চিত্র।
যে সব মহিলা ‘নোংরা পোশাক’ পরেন, তাঁরা শূর্পণখার মতো! এমন মন্তব্য করে এ বার বিতর্ক বাধালেন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। গত বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে মহিলাদের পোশাক নিয়ে এই মন্তব্য করেছেন বিজেপি নেতা। যা প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দায় সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল। একদা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সক্রিয় কৈলাসের এই মন্তব্যের নিন্দায় সরব হয়েছে তৃণমূল।
কৈলাস বলেছেন, ‘‘মহিলারা নোংরা পোশাক পরেন...। মহিলাদের আমরা দেবী বলে মানি...। কিন্তু তাঁদের মধ্যে তার কোনও বালাই নেই। ওঁরা শূর্পণখার মতো।’’ রামায়ণের একটি চরিত্রের নাম শূর্পণখা। যিনি রাবণের বোন। শূর্পণখার নাক এবং কান কেটেছিলেন লক্ষ্মণ। সেই শূর্পণখার সঙ্গে এ বার তরুণীদের তুলনা টানলেন বিজয়বর্গীয়।
এতেই শেষ নয়। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কৈলাসের সংযোজন, ‘‘ঈশ্বর তোমাদের (তরুণী) সুন্দর শরীর দিয়েছেন। ভাল পোশাক পরো।’’ এর পরই অভিভাবকদের উদ্দেশে কৈলাসের পরামর্শ, ‘‘দয়া করে আপনার সন্তানদের শেখান। আমি খুবই বিব্রত।’’ যুবকদের প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেছেন বিজয়বর্গীয়। বলেছেন, ‘‘রাতে যখন দেখি যুবকরা মদ্যপান করছেন, মনে হয় শিক্ষা দিতে চড় কষাই।’’
এই প্রথম নয়, এর আগেও কৈলাসের একাধিক মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। গত বছর বিহারের পালাবদল নিয়ে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে আক্রমণ করতে গিয়ে কৈলাস বলেছিলেন, ‘‘মহিলারা যে ভাবে তাঁদের প্রেমিক বদলান, নীতীশ তেমন ভাবেই শরিক বদলান।’’ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পর্যবেক্ষক ছিলেন বিজয়বর্গীয়। তবে ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন চুরমার হওয়ার পর থেকেই এ রাজ্যের রাজনীতিতে আর দেখা যায় না তাঁকে। শনিবার তাঁর এই বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে আবার শিরোনামে এসেছেন কৈলাস।
বিজয়বর্গীয়ের মন্তব্যের নিন্দায় সরব হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘এই ধরনের লিঙ্গবৈষম্যমূলক মন্তব্য একটা দলের নিম্ন মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। ওঁকে দেখুন এক বার। ভাবুন এক বার, আপনি নিরাপদ কি না!’’
টুইটারে কৈলাসের মন্তব্যের নিন্দায় সরব হয়েছেন জহর সরকার। ছবি টুইটার।
কৈলাসের মতো শূর্পণখা নিয়ে এক মন্তব্য করে অতীতে বিতর্ক বাধিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৮ সালে রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ রেণুকা চৌধুরির হাসি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘রামায়ণ সিরিয়ালের পরে এমন শূর্পণখার মতো হাসি আপনার সৌজন্যেই শুনতে পেলাম।’’ ‘মোদী পদবি’ নিয়ে মন্তব্যের জন্য রাহুল গান্ধীকে সাজা শুনিয়েছে গুজরাতের আদালত। যার জেরে সাংসদ পদ খুইয়েছেন রাহুল। এর পাল্টা মোদীর ওই মন্তব্যে নিয়ে সম্প্রতি অপরাধমূলক মানহানির মামলা করার কথা জানিয়েছেন রেণুকা। এ বার রামায়ণের চরিত্র শূর্পণখার সঙ্গে দেশের তরুণীদের তুলনা টেনে মন্তব্য করে বিতর্ক বাড়ালেন কৈলাস।