অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
দিল্লির ক্ষমতা দখলের রাস্তা নাকি উত্তরপ্রদেশ হয়েই যায়। যার অর্থ, লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে যে দল ভাল ফল করে, তারাই দিল্লির মসনদ দখল করে। গত দু’টি লোকসভা নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পর পর দু’বার উত্তরপ্রদেশে আশাতীত আসন জয়ের ফলে দিল্লির ক্ষমতা দখল করা অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর। এ বারও হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে উত্তরপ্রদেশের লোকসভার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। সূত্রের মতে, প্রাথমিক ভাবে উত্তরপ্রদেশের ১৭টি আসনকে লাল তালিকায় রেখেছে দল। যেগুলিতে দল প্রবল লড়াইয়ের আশঙ্কা করছে।
বিজেপি সূত্রের মতে, যোগী-রাজ্যে দলের পরিস্থিতি সার্বিক ভাবে ভাল হলেও, উত্তরপ্রদেশের ৮০টির মধ্যে ১৭টি লোকসভা আসনে বিজেপির অবস্থা নড়বড়ে। সেগুলি হল বিজনৌর, নগিনা, সহারানপুর, মুরাদাবাদ, রামপুর, সম্ভল, আমরোহা, বদায়ূঁ, আজমগড়, ঘোসী, গাজীপুর, রায়বরেলি, ফিরোজাবাদ, শ্রাবস্তী, অম্বেডকর মেনপুরি, লালগঞ্জ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই আসনগুলি অধিকাংশ পশ্চিম ও মধ্য উত্তরপ্রদেশে। বিজেপি শিবিরের ব্যাখ্যা, যে আসনগুলি মুসলিমবহুল এবং যাদব ভোটারদের উপস্থিতি অত্যন্ত বেশি, সেগুলিতে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে কড়া টক্করের আশঙ্কা করছে দল। পাশাপাশি অনেকগুলি আসন জাঠ অধ্যুষিত। তাই জাঠেদের প্রতিনিধিত্ব করা রাষ্ট্রীয় লোকদলের উপস্থিতিও ওই এলাকায় বিজেপির জন্য চিন্তার কারণ।
গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ৬২টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু লাল তালিকায় থাকা ওই ১৭টি কেন্দ্রের মধ্যে কেবল বদায়ূঁ ও ফিরোজাবাদে জয় পেয়েছিলেন গেরুয়া প্রার্থীরা। পরে অবশ্য রামপুর ও আজমগঢ়ের উপনির্বাচনে ওই দুই কেন্দ্রে জেতে বিজেপি প্রার্থীরা। ফলে এ যাত্রায় ওই আসনগুলিতে ভাল ফল করতে এখন থেকেই ঝাঁপানোর পরিকল্পনা নিয়েছে দল। তা ছাড়া, বিজেপিকে চিন্তায় রেখেছে সদ্য ঘোসী বিধানসভা উপ-নির্বাচনে হার। সাধারণত বিধানসভা উপ-নির্বাচনে শাসক দলের প্রার্থীরাই জয়ী হন। ঘোসী কেন্দ্রে দারা সিংহ চৌহানের মতো ওজনদার নেতাকে প্রার্থী করেও সমাজবাদী পার্টির কাছে পরাস্ত হতে হয় যোগী আদিত্যনাথকে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ওই আসনে ‘ইন্ডিয়া’র সর্বসম্মত প্রার্থী হিসেবে এসপি-র সুধাকর সিংহকে দাঁড় করানো হয়েছিল।
প্রায় ৪২ হাজার ভোটে হারতে হয় বিজেপি প্রার্থীকে।
ওই নির্বাচনের পরে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় যে উত্তরপ্রদেশে যদি ‘ইন্ডিয়া’ বিবাদ ভুলে বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বসম্মত প্রার্থী দাঁড় করাতে পারে, তা হলে যোগী আদিত্যনাথকে গোটা রাজ্যেই কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘ওই হারের পরেই নড়েচড়ে বসেন দলীয় নেতৃত্ব। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ওই লড়াইয়ে ছিল না বিএসপি। ফলে লড়াই কার্যত দ্বিমুখী হয়ে পড়ে। দলিত ভোট গোটাটাই পান এসপি প্রার্থী। এই প্রবণতা বজায় থাকলে তা দলের জন্য উদ্বেগের।’’ গত লোকসভা নির্বাচনে এসপি-বিএসপি এক জোট হয়ে লড়েছিল। কিন্তু তাতে ফায়দা না হওয়ায় আপাতত এনডিএ ও ইন্ডিয়া— দু’পক্ষ থেকেই সমদূরত্ব বজায় রেখে চলছেন মায়াবতী। তাই দলিত ভোটকে কাছে টানার লক্ষ্যে মায়াবতীকে এনডিএ জোটে অন্তর্ভুক্ত করার প্রশ্নে ভাবনাচিন্তা রয়েছে দলের মধ্যে।
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশ নিয়ে বৈঠকে ছিলেন অমিত শাহ। রাজ্য নেতৃত্ব উত্তরপ্রদেশে যে ১৭টি কেন্দ্র চিহ্নিত করেছে, সেগুলিতে গেরুয়া ঝড় তুলতে ভূপেন্দ্র যাদবের মতো নেতাকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। যিনি ২০১৪ সালে উত্তরপ্রদেশের লোকসভায় ভাল ফল করার পিছনে অন্যতম কারিগর ছিলেন। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, দীপাবলির পরে যাদব সমাজের ভূপেন্দ্রকে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে পাঠানো হবে। তাঁর লক্ষ্যই হবে, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে যাদব ভোটকে পাশে টানা।