সিএএ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে মোদী সরকার। —ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি তাদের গণতন্ত্র সূচকে ১০ ধাপ নেমে গিয়েছে ভারত। এ বারে তাদের পত্রিকার সর্বশেষ সংস্করণে ‘কভার স্টোরি’ হল, ‘অসহিষ্ণু ভারত (ইনটলারেন্ট ইন্ডিয়া)। যাতে লেখা হয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে ভেঙে ফেলছেন নরেন্দ্র মোদী। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের নামে এই বিভাজন ঘটিয়ে বিজেপি রাজনৈতিক ভাবে লাভবান হতে পারে। তবে ভারতের ২০ কোটি মুসলিম এই আতঙ্কে রয়েছেন যে, মোদী দেশটাকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করছেন। ‘দ্য ইকনমিস্ট’ তাদের এই প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের কথা টুইটারেও প্রচার করেছে। প্রচ্ছদটিতে রয়েছে একটি কাঁটাতারের বেড়া। একটি কাঁটাতার উঠে রয়েছে। তাতেই ফুটেছে একটি পদ্মফুল।
এমন প্রতিবেদনের জন্য পাল্টা আক্রমণে নেমেছে বিজেপি। তাদের দলের ভি চৌথাওয়ালে টুইট করেছেন, ‘‘ভেবেছিলাম ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ চলে গিয়েছে। কিন্তু @দ্যইকনমিস্ট-এর সম্পাদকেরা এখনও ঔপনিবেশিক যুগে পড়ে রয়েছেন। এঁদের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, মোদীকে ভোট না-দেওয়ার। কিন্তু ভারতের ৬০ কোটি মানুষ তা না-মানায় ওঁরা খেপে গিয়েছেন।’’ আর একটি টুইটে তিনি লিখছেন, ‘‘ঔদ্ধত্য এতটাই যে, এখন এঁরা দেশের সুপ্রিম কোর্টকেও উপদেশ/ হুমকি দিচ্ছেন। অনুপ্রবেশকারীদের নাকি ভারতে ধাওয়া করে ধরা হচ্ছে! আর ব্রিটেনে কী হয়?... দক্ষতার সঙ্গে এঁরা সিএএ-র লক্ষ্যটাকে গুলিয়ে দিচ্ছেন। কিছু মানুষের ঔপনিবেশিক মনোবৃত্তি কখনও ঘোচে না।’’
পত্রিকাটির প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে গত শতকের আটের দশকে রাম মন্দির আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিজেপির উত্থান থেকে শুরু করে তাদের বর্তমান ধর্মীয় বিভাজনের নীতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। সিএএ, এনআরসি, এনপিআরের মতো বিষয়গুলি নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে মোদী সরকারের। লেখা হয়েছে, ‘‘বিদেশিদের চিহ্নিত করে দেশ থেকে তাড়ানোর পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে প্রকৃত ভারতীয়দের একটি রেজিস্টার তৈরি করতে চাইছে সরকার। ১৩০ কোটি মানুষের উপরে এর প্রভাব পড়বে। তালিকা তৈরি করা, আপত্তি জানানো, সংশোধন— গোটা প্রক্রিয়াটি সেরে উঠতে অনেক বছর লেগে যাবে। বারবার উত্তেজনা ছড়াবে দেশে। এবং তার জেরে দেশের অর্থনীতির অস্বস্তিকর প্রসঙ্গগুলি থেকে নজর ঘুরে যাবে। ভোটে বিজেপির বিপুল জয়ের পর থেকেই খোঁড়াচ্ছে যে অর্থনীতি।
আরও পড়ুন: অত্যধিক কর সামাজিক অবিচার, মত বোবডের
এ দিকে ডাভোসে মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন হাঙ্গেরীয় মার্কিন ধনকুবের জর্জ সোরোস। লগ্নি-ব্যবসার পাশাপাশি সমাজকল্যাণে দানধ্যানও করেন সোরোস। বছরে এক বার বিশ্বের পরিস্থিতি, রাজনীতি ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে খোলামেলা বক্তৃতা দিয়ে থাকেন। এ বছরের বক্তৃতায় তাঁর মূল নিশানা ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানন্ত্রী মোদী। সোরোসের খেদ, জাতীয়তাবাদ ক্রমে ক্রমে মুছে যাওয়ার বদলে উল্টে মাথা চাড়া দিচ্ছে। সব থেকে বড় ও সবচেয়ে ভয়াবহ ধাক্কাটি এসেছে ভারতে। যেখানে, গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত হয়ে নরেন্দ্র মোদী একটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র তৈরি করছেন। মুসলিম অধ্যুষিত আধা স্বশাসিত এলাকা, কাশ্মীরে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করছেন। লক্ষ লক্ষ মুসলিমের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।