উত্তরপ্রদেশে মরিয়া বিজেপি। ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করার পরেও আন্দোলন থেকে সরে আসেনি কৃষক সংগঠনগুলি। লখনউয়ে কৃষক মহাপঞ্চায়েতে ব্যাপক সাড়াও মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপি। এ বার এক একটি সম্প্রদায়ের মন জয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। দেওয়া হচ্ছে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও।
উত্তরপ্রদেশের কানপুরে নামদেব গুরুদ্বারে আজ পৌঁছে গিয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্যও। অনেকে মনে করছেন, লখিমপুর খেরিতে চার জন শিখ কৃষকের মৃত্যুর পর ভোটে যাতে কোনও নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সে জন্যই এখন মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজেপি নেতারা। নামদেব গুরুদ্বারে গিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন নড্ডা। দাবি করেছেন, শিখ সম্প্রদায়ের জন্য মোদী যে কাজ করেছেন, তা আর কেউই করতে পারেননি। বিজেপি সভাপতির কথায়, ‘‘শিখ সম্প্রদায়ের স্বার্থে মোদী অসংখ্য কাজ করেছেন। শিখদের বহু দিনের স্বপ্নগুলি বাস্তবায়িত করেছেন তিনি। ১৯৮৪-র দাঙ্গায় যত বড় মাপের নেতারাই জড়িয়ে থাকুন না কেন, তাঁদের জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন মোদী।’’ তালিবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর কাবুল থেকে গুরু গ্রন্থ সাহিবের তিনটি প্রতিলিপি যে ভাবে দিল্লিতে নিয়ে আসা হয়েছে, তার কৃতিত্বও আজ প্রধানমন্ত্রী মোদীকে দিয়েছেন বিজেপি সভাপতি। লখনউয়ের রাজনৈতিক শিবিরের অনেকে মনে করছেন, এর মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও ভোটমুখী পঞ্জাবের শিখ সম্প্রদায়ের উদ্দেশেও বার্তা দিতে চেয়েছেন বিজেপি সভাপতি।
ভোটের আগে ধর্মীয় সম্প্রদায়কে কাছে টানার কৌশলের পাশাপাশি উন্নয়নের স্বপ্নও ফিরি করছে বিজেপি। আগামী ২৫ নভেম্বর উত্তরপ্রদেশের গৌতম বুদ্ধ নগরে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী। এটি হবে উত্তরপ্রদেশের পঞ্চম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ভারতের অন্য কোনও রাজ্যে এতগুলি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নেই। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বিবৃতি দিয়ে আজ বলা হয়েছে, যোগাযোগ পরিকাঠামো গড়ে তোলা ও বিমান পরিবহণের ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন মোদী। সে কারণেই গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন বিমানবন্দরটি। সরকারি সূত্রের খবর, প্রায় ১৩০০ হেক্টর জমিতে গড়ে তোলা হবে বিমানবন্দরটি। কাজ শেষ করার কথা লোকসভা ভোটের বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালে। বিমানবন্দরটি গড়ে তুলতে প্রথম পর্যায়েই খরচ হবে প্রায় ১০ হাজার ৫০ কোটি টাকা।
তবে গৌতম বুদ্ধ নগরের জেওর বিমানবন্দরের শিলান্যাসের আগেই অবশ্য কৃতিত্ব নেওয়ার প্রতিযোগিতাও শুরু হয়ে গিয়েছে। বিএসপি নেত্রী মায়াবতী আজ দাবি করেছেন, এই বিমানবন্দর তৈরির রূপরেখা তৈরি হয়েছিল তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়েই। মায়াবতীর আরও দাবি, সমাজবাদী পার্টি কিংবা বিজেপি— যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তাঁর হাতে তৈরি প্রকল্পগুলিই নিজেদের বলে চালানোর চেষ্টা করে। এ ব্যাপারে কংগ্রেসকেও নিশানা করতে ছাড়েননি মায়াবতী। বলেছেন, উত্তরপ্রদেশে সব চেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। অথচ তিনি অল্প সময়ের মধ্যে যে কাজ করেছেন, কংগ্রেস এত বছরেও তা করতে পারেনি।
উন্নয়নের কৃতিত্ব নিয়ে এমন লড়াইয়ের মধ্যেই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে চাপের মধ্যে রাখতে জোটের প্রস্তুতি প্রায় সেরে ফেলেছে সমাজবাদী পার্টি ও রাষ্ট্রীয় লোকদল (আরএলডি)। রাজ্যের ৪০৩টি বিধানসভা আসনের মধ্যে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে রয়েছে একশোটির মত আসন। ২০১৭-র ভোটে বিজেপি এই এলাকা থেকে ৭৬টি আসন জিতেছিল। তবে কৃষক আন্দোলনের জেরে এখন এই এলাকায় বিজেপির জন-সমর্থনে চিড় ধরেছে। বিজেপির পক্ষ থেকে তা-ই জানানো হয়েছে, অমিত শাহ নিজে এ বার এই এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে থাকবেন। এই প্রেক্ষাপটেই আজ সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব ও আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধরি জোটের বার্তা দিয়ে দিয়েছেন। অখিলেশের সঙ্গে বৈঠকের পর চৌধরি জানিয়েছেন, আসনরফা নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে। শীঘ্রই এ নিয়ে ঘোষণা করবেন তাঁরা। নিজেদের টুইটার হ্যান্ডলে দু’জনের ছবি প্রকাশ করেছেন দুই নেতা। জানিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নে একজোট হয়ে এগিয়ে যাবেন তাঁরা।