Haryana Assembly Election 2024

‘অগ্নিবীর’-ক্ষোভ সামলাতে পদ্মের ভরসা ইজ়রায়েল

সুনীল এ কথা শুধু বিজেপি দফতরে বসে বলছেন, তা নয়, প্রচারে বেরিয়েও বলছেন। গোটা হরিয়ানার বিজেপি নেতারা ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প নিয়ে প্রশ্নের মুখে ইজ়রায়েলের ধুয়ো তুলছেন।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

কারনাল শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:১১
Share:

কুস্তিগির তথা কংগ্রেস প্রার্থী বিনেশ ফোগতের সঙ্গে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। বুধবার হরিয়ানার জুলানায়। ছবি: পিটিআই।

দেওয়াল জোড়া টিভি-তে মাঝে মাঝেই ইজ়রায়েল-ইরান যুদ্ধের ‘ব্রেকিং নিউজ’ চলছে। বিজেপির জেলা মহামন্ত্রী ওরফে সাধারণ সম্পাদক সুনীল গোয়েল দফতর আলো করে বসে রয়েছেন। ইজ়রায়েলের যুদ্ধের খবরে নজর যাচ্ছে। আর মুখে স্মিত হাসি ফুটে উঠছে। ‘‘দেখছেন, এই যে অগ্নিবীররা রয়েছে বলেই কিন্তু ইজ়রায়েল প্যালেস্তাইন, ইরান, লেবাননের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে। ইজ়রায়েলে সকলকে সেনাবাহিনীতে আড়াই বছর চাকরি করতে হয়। সকলের সামরিক প্রশিক্ষণ রয়েছে। তাই ওরা ইসলামি রাষ্ট্রগুলির বিরুদ্ধে লড়ছে!’’

Advertisement

সুনীল এ কথা শুধু বিজেপি দফতরে বসে বলছেন, তা নয়, প্রচারে বেরিয়েও বলছেন। গোটা হরিয়ানার বিজেপি নেতারা ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প নিয়ে প্রশ্নের মুখে ইজ়রায়েলের ধুয়ো তুলছেন। হরিয়ানার হাজার হাজার তরুণ প্রতি বছর সেনাবাহিনীতে চাকরির জন্য প্রশিক্ষণ নেন। কিন্তু মোদী সরকার মাত্র চার বছরের জন্য সেনাবাহিনীতে নিয়োগের ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প চালু করায় বেকার, চাকরিপ্রার্থী তরুণদের ক্ষোভ বেড়েছে। লোকসভা ভোটে বিজেপিকে তার খেসারত দিতে হয়েছিল। হরিয়ানার বিধানসভা ভোটেও বিজেপি নেতারা প্রচারে গেলে প্রশ্নের মুখে পড়ছেন— মাত্র চার বছর পরে সেনাবাহিনীর চাকরি চলে গেলে তরুণদের ভবিষ্যৎ কী?

রাহুল গান্ধী-সহ কংগ্রেস নেতারা নিয়মিত ‘অগ্নিবীর’ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহদের তার জবাব দিতে হচ্ছে। কিন্তু হরিয়ানার যুবকদের প্রশ্ন থামছে না। এই প্রশ্নের মুখেই হরিয়ানার বিজেপি নেতারা ইজ়রায়েলকে টেনে আনছেন। কারনালের নেতা সুনীল যেমন বলছেন, ‘‘ইজ়রায়েল কবে থেকে লড়ছে দেখুন। ওখানে ক্ষেপণাস্ত্র পড়লেও কেউ ভয় পায় না। কারণ, সবাই সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষিত। শুধু ইজ়রায়েল নয়। রাশিয়াতেও সামরিক বাহিনীকে কয়েক বছর চাকরি করা বাধ্যতামূলক। তাই রাশিয়াও এত দিন ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে লড়তে পারছে।’’

Advertisement

সুনীলের যুক্তি, ‘‘ভারতের চার দিকে যে ভাবে অশান্ত পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, তাতে দেখুন, এ দেশের তরুণরা অগ্নিবীর প্রকল্পে চার বছর সামরিক প্রশিক্ষণ পেয়েই যাবেন। চার বছর পরে সেনার চাকরি পাকা না হলেও যথেষ্ট টাকা পাবেন। তা ছাড়া, হরিয়ানায় বিজেপি রাজ্য সরকারের চাকরিতে অগ্নিবীরদের জন্য বিশেষ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।’’

কারনালে বিজেপির জেলা সদর দফতরের ‘কর্ণ কমল’। কারনালের মানুষের বিশ্বাস, মহাভারতের দুর্যোধন কর্ণকে যে অঙ্গ রাজ্যের রাজা করেছিলেন, কারনাল সেই অঙ্গ রাজ্যেরই অন্তর্গত। কর্ণের নাম থেকেই এলাকার নাম কারনাল। ‘কর্ণ কমল’ থেকে বেরিয়ে কিছু দূর এগোলেই সেনা জওয়ানদের ছবি আঁকা বোর্ডে বড় হরফে লেখা ‘ডিফেন্স অ্যাকাডেমি’। গেট ঠেলে ঢুকলে ভিতরে সবুজ মাঠ। জিমন্যাসিয়ামের মতো নানা রকম শারীরচর্চার ব্যবস্থা। কোথাও গর্ত খোঁড়া। কোথাও সুড়ঙ্গ কাটা। জনা বিশেক তরুণ শারীরিক কসরতে ব্যস্ত। মাথার চুল ছোট ছোট করে ছাঁটা। হরিনায়ায় সব শহরেই এমন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।

মস্ত গোঁফওয়ালা ‘সুবেদার সাহেব’ বেরিয়ে এলেন। সেনার অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার। তাই এলাকায় ‘সুবেদার সাহেব’ নামেই পরিচিত। এখন সেনায় নিয়োগ পরীক্ষার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলেছেন। কিন্তু আফসোস করছেন। ছেলেছোকরাদের মধ্যে উৎসাহটাই চলে গিয়েছে। যে দিন থেকে মোদী সরকার ‘অগ্নিবীর’ চালু করেছে, সে দিন থেকে আর তরুণদের মধ্যে সেনায় চাকরির চেষ্টা নেই। সুবেদার সাহেবের প্রশ্ন, ‘‘এত খাটাখাটনি করে কেউ মাত্র চার বছরের জন্য সেনায় চাকরি করতে যাবে কেন? তারপরে যে পাকা চাকরি মিলবে, তার তো কোনও নিশ্চয়তা নেই!”

কংগ্রেস নেতারা এই অসন্তোষের আঁচ পেয়ে খুশি। তাঁদের মতে, হরিয়ানার বিজেপি সরকারের উপরে এখন ‘কিসান, জওয়ান, পহেলওয়ান’ সবাই ক্ষুব্ধ। ৫ অক্টোবর হরিয়ানায় ভোটগ্রহণ। ভোটের বাক্সে সেই ক্ষোভ বিজেপির বিরুদ্ধে পড়বে। হরিয়ানার কংগ্রেস নেতা আশিস দুয়ার কটাক্ষ, ‘‘হরিয়ানার বিজেপির পতন এ বার ইজ়রায়েলের সেনা এলেও ঠেকাতে পারবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement