আরিফ খান।
দেশভাগের সময় পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দুদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সে সময়ের কংগ্রেসের জাতীয় নেতারা। বলেছিলেন, ধর্মীয় নিপীড়নে দেশ ছেড়ে পালাতে হলে ভারতে তাঁদের জন্য অবারিত দ্বার। আজ রাজধানীতে ‘সভ্যতাগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক নাগরিকত্ব’ বিষয়ক একটি বক্তৃতায় কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান দাবি করলেন, মোদী সরকার নয়া নাগরিকত্ব আইন এনে সেই প্রতিশ্রুতিই পালন করছে মাত্র।
নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ-সহ গোটা দেশ যখন প্রতিবাদে উত্তাল, তখন আরিফের মতো একটি মুখকে সামনে এনে
গোটা বিষয়টির ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করল বিজেপি। এক সময় রাজীব গাঁধীর মন্ত্রিসভার সদস্য, উত্তরপ্রদেশের এই প্রবীণ মুসলিম নেতার সঙ্গে এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠতা যথেষ্ট। মোদী যে দিন থেকে তিন তালাক বিল নিয়ে সক্রিয় হয়েছেন, সে দিন থেকেই মুসলিম মহিলাদের সমানাধিকার নিয়ে মুখর হয়েছেন আরিফ। তাঁকে উদ্ধৃত করেই গত জুনে সংসদে রাজীব ও কংগ্রেস নেতৃত্বকে আক্রমণ করেছিলেন মোদী।
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, বিজেপির দিক থেকে এই পরিস্থিতিতে আরিফকে কাজে লাগানোর চেষ্টা খুবই স্বাভাবিক। বিজেপি সাংসদ ভূপিন্দর যাদবের কথায়, ‘‘এই আইন নিয়ে বিরোধীরা ভুল বোঝাচ্ছে মানুষকে। সে কারণে আমরা ঠিক করেছি তার জবাব দেব।’’ কেরলের রাজ্যপালকে দিয়ে এই পরিকল্পনার সূচনাই করা হল বলে মনে করা হচ্ছে। ভূপিন্দর জানালেন, এর পর আগামী দশ দিনে বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে ঘরে ঘরে গিয়ে তিন কোটির বেশি পরিবারকে সরাসরি নয়া নাগরিকত্ব আইন বোঝানো
হবে। গোটা দেশের প্রতি জেলায় জনসভা বা সভা হবে। আড়াইশোর বেশি জায়গায় সাংবাদিক সম্মেলন করা হবে। আজ দেশের ১১০১ জন শিক্ষাবিদ এই আইনকে সমর্থন করে বিবৃতিও জারি করেছেন।’’ শিক্ষাবিদদের এই দলে আছেন স্বপন দাশগুপ্ত, শিশির বাজোরিয়ারা।
আজ বক্তৃতার শুরুতেই আরিফ বলে নেন, রাজ্যপাল পদে থেকে রাজনৈতিক কোনও বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলতে পারবেন না।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও আইন এবং সংবিধান রক্ষার্থে মুখ খোলাটা তাঁর ‘দায়িত্বের’ মধ্যে পড়ে। ১৯৪৬ সালে মৌলানা আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য, ১৯৪৭-এর নভেম্বরে এআইসিসি-র প্রস্তাব, গাঁধী-নেহরু থেকে শুরু করে ২০০৩
সালে মনমোহন সিংহের বিবৃতি পর্যন্ত উদ্ধৃত করেন আরিফ। যেখানে বারবারই বলা হচ্ছে, ভারত এবং বাংলাদেশে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হওয়া মানুষদের আশ্রয় দিতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আরিফের যুক্তি, ‘‘তখনকার কেন্দ্রীয় সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এখন অমিত শাহ নিচ্ছেন বলে তাঁকে তো দোষ দেওয়া যায় না।’’