প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতি-রোমন্থনে বেকায়দায় পড়ল বিজেপি। হাসি ফুটল কংগ্রেসের মুখে।
বিরোধীদের অভিযোগ, হিন্দু ধর্মকে নিজেদেরই একচেটিয়া সম্পত্তিতে পরিণত করতে চায় বিজেপি-আরএসএস। প্রণববাবুর নতুন বই ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ার্স—১৯৯৬-২০১২’ সেই প্রচেষ্টাতেই কার্যত জল ঢেলে দিয়েছে। তিনি বুঝিয়েছেন, কংগ্রেসের নেতারাও হিন্দু ধর্ম, ধর্মগুরুদের যথেষ্ট সম্মান করেন।
আরও পড়ুন: পাশে নীতীশ, জোটবার্তায় জোর মোদীর
সদ্যপ্রকাশিত আত্মকথায় প্রণব তাঁর মেজাজ হারানোর বেশ কিছু ঘটনা তুলে ধরেছেন। জানিয়েছেন, সংসদে বিরোধীদের বিক্ষোভে মেজাজ হারাতেন বলে সনিয়া গাঁধী তাঁকে মজা করে বলেছিলেন, ‘‘এই জন্যই আপনি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না।’’ কিন্তু মনমোহন সরকারের একবারে প্রথম দিকের ঘটনাটিতে রাজনীতিকদের মধ্যে শোরগোল পড়েছে।
তামিলনাড়ুতে ২০০৪-এর নভেম্বরে কাঞ্চীর শঙ্করাচার্য জয়েন্দ্র সরস্বতীকে মন্দিরের ম্যানেজারের খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়। প্রণব লিখেছেন, ‘‘গোটা দেশে তখন দীপাবলি উদযাপন চলছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে আমি জোর সমালোচনা করি গ্রেফতারের সময় নিয়ে। প্রশ্ন তুলি, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবনা কি শুধু হিন্দু ধর্মগুরুতেই সীমাবদ্ধ? ইদের সময়ে পুলিশ কোনও মুসলিম মৌলবিকে গ্রেফতারের সাহস দেখাত?’ এরপর তিনি অবিলম্বে শঙ্করাচার্যকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন বলেও লিখেছেন প্রণব।
সম্প্রতি গুজরাত সফরে গিয়ে রাহুল গাঁধী একাধিক মন্দিরে গিয়েছেন। কংগ্রেস বোঝাতে চাইছে, তারা মোটেই হিন্দু-বিরোধী নয়। প্রণববাবু এখন সরাসরি কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু স্মৃতি রোমন্থনের মাধ্যমে তিনি কংগ্রেসের প্রচারের কাজটিই করেছেন বলে দাবি কংগ্রেস নেতাদের। কংগ্রেস যে আত্মসমালোচনা করার সাহস রাখে, তা-ও বুঝিয়েছেন প্রণব। বইপ্রকাশের সময়ে এক সাক্ষাৎকারে ২০১৪-য় কংগ্রেসের হার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেছেন, প্রথম ইউপিএ সরকারে জোট পরিচালনা খুব ভাল হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারে তা হয়নি। এই প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদাহরণও টেনেছেন প্রণব। বলেছেন, ‘‘ওঁকে সামলানো নিঃসন্দেহে কঠিন ছিল। কিন্তু মমতার ১৯ জন লোকসভার সাংসদ ছিল বলে তাঁকে সামলানো জরুরি ছিল। মন্ত্রিসভায় প্রকাশ্যে আমাদের বিবাদ হয়েছে। তা সত্ত্বেও আমি ওঁকে জোটে ধরে রাখতে পেরেছিলাম।’’
আবার পরমাণু চুক্তি নিয়ে বামেদের সঙ্গে জোটে টানাপড়েনের কথাও বইতে বলেছেন প্রণব। লিখেছেন, ‘‘জ্যোতি বসু পরমাণু চুক্তির ভালো দিকটি বুঝতে পেরে প্রকাশ কারাটকে আমার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। কারাট আমার সঙ্গে দেখা করলেও বিরোধিতায় অনড় ছিলেন। ওঁর জ্যোতি বসু ও বাংলা লবির কথা প্রকাশ্যে অমান্য করাটা যথেষ্ট আশ্চর্যজনক ছিল।’’