ফাইল চিত্র।
মুজ়ফ্ফরনগর হিংসার স্মৃতি উস্কে দিয়ে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে দলের প্রার্থীদের জেতানোর চেষ্টায় নেমেছে বিজেপি। গত কয়েক দিন অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ, যোগী আদিত্যনাথেরা একযোগে আক্রমণ করে চলেছেন অখিলেশ সিংহ যাদব, জয়ন্ত চৌধরি ও তাঁদের এসপি-আরএলডি জোটকে। ভোটের প্রচারে বিজেপির শীর্ষ নেতারা তুলে আনছেন, অখিলেশ জমানায় ঘটা মুজ়ফ্ফরনগর হিংসার প্রসঙ্গ। নাম না করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর দিকেও যোগী আঙুল তুলেছেন ওই হিংসার প্রশ্রয়দাতা হিসাবে।
মুজ়ফ্ফরনগরে জাঠ নেতা জয়ন্তের সঙ্গে যৌথ সভা করতে যাওয়ার পথে দিল্লিতে তাঁর হেলিকপ্টার যাত্রায় দেরি করানোর জন্য অখিলেশ বিজেপিকে তুলোধোনা করছেন সম্প্রতি। আপাত ভাবে তারই পাল্টা হিসেবে মুজ়ফ্ফরনগর হিংসার প্রসঙ্গ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী। বিহারের ভোটে রাহুল ও লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র তেজস্বী যাদবকে নরেন্দ্র মোদী বলতেন ‘জোড়া যুবরাজ’। সেই একই ঘরানায় যোগীর মুখে উঠে এসেছে ‘দো লড়কোঁ’-র কথা। অখিলেশ ও জয়ন্তের জুটি সম্পর্কে তিনি আজ বলেন, “এই যে এখন দু’টি ছেলে এসেছেন, ২০১৪ ও ২০১৭-তেও তেমন দু’জন জোট বেঁধেছিলেন। এক জন লখনউয়ের (অখিলেশ), অন্য জন্য দিল্লির (রাহুল)। রাজ্যবাসী স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, এমন জুটির কোনও দামই নেই।” যোগীর দাবি, ২০১৩ সালে মুজ়ফ্ফরনগরে দু’জন জাঠ যখন খুন হন, ‘লখনউয়ের ছেলেটি’ তখন ক্ষমতায়। ওই খুনের জন্য তিনিই দায়ী। রাজ্যর রাজধানীতে ডেকে দাঙ্গাকারীদের সংবর্ধনা দিয়েছিলেন তিনি। যাঁরা খুনের মামলা দায়ের নিশ্চিত করছিলেন, তাঁদেরই ফাটকে পোরা নিশ্চিত করেছিলেন। আর ‘দিল্লির ছেলেটি’ সমর্থন করেছিলেন এ সবে। আবার ফিরেছে তেমন জুটি। মোড়কটা শুধু আলাদা।”
মুজ়ফ্ফরনগরের হিংসার কথা তুলছেন অমিত শাহও। তাঁর কথায়, “হিংসার শিকার হয়েছেন যাঁরা, তাঁদেরই অভিযুক্ত বানানো হয়েছিল— ২০১৩-র ওই ঘটনার কথা কি কেউ ভুলতে পারবেন?” অপরাধ দমনে যোগীর ভূমিকার প্রশংসা করতে গিয়ে শাহ পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের অতরৌলীতে এক প্রতার সভায় শনিবার বলেন, “অপরাধী ও মাফিয়াদের এখন তিন জায়গায় পাওয়া যেতে পারে। উত্তরপ্রদেশের জেলে, এসপি-র প্রার্থী তালিকায় কিংবা উত্তরপ্রদেশের বাইরে।” অখিলেশকে বিঁধে শাহের মন্তব্য, “আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মিথ্যা বলতে লজ্জাও করে না তাঁর। অথচ তাঁরই আমলে রাজ্যে অপরাধের বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল।”
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ভোট প্রথম দফায়, ১০ ফেব্রুয়ারি। বিজেপি নেতৃত্বের কাছে এটা স্পষ্ট, কৃষি আইন নিয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে মোদী সরকার গোঁ ধরে থাকায়, এই এলাকায় কৃষকেরা চটে আছেন। যাঁদের একটা বড় অংশ হলেন জাঠ। এসপি-আরএলডি জোটের দাবি, বিজেপির প্রতি বিমুখ এই জাঠেদের ভোট বিভাজনের কৌশল নিয়েছে বিজেপি। মুসলিমদের বিরুদ্ধে জাঠেদের তাতিয়ে তোলার চেষ্টা সমানে চালাচ্ছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাঁদের লক্ষ্য, বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া জাঠেরা যেন এসপি-আরএলডি জোটকে ভরসা না করেন, যেন তাঁদের একটা বড় অংশের ভোট কাটতে পারে মায়াবতীর বিএসপি বা অন্যরা। প্রতিপক্ষের শিবিরে ভোটের এই বিভাজন ঘটিয়ে বিজেপি তাদের প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে চাইছে।