বিপ্লব দেব
বাড়িতে এসে বসে আছেন রাজ্য সভাপতি। দু’ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। কিন্তু টয়লেট থেকে বেরোচ্ছেন না গৃহকর্তা! কেন? না, বিজেপি-র টিকিটে ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোটে লড়ার ইচ্ছা তাঁর নেই!
এ কাহিনি এখন অতীত। ত্রিপুরা বিজেপি-র বর্তমান রাজ্য সভাপতির বাড়িতে এখন জমা হচ্ছে দিস্তে দিস্তে বায়োডাটা। রাজ্যে আসন সাকুল্যে ৬০টা। কিন্তু পদ্ম চিহ্নে দাঁড়াতে চেয়ে প্রত্যাশীর সংখ্যা রোজই বাড়ছে।
পাহাড়ের উপজাতি এলাকায় নিশ্চিহ্ন আর সমতলে নগন্য শতাংশ— এই ছিল যে বিজেপি-র হাল, তারাই সাম্প্রতিক কালে একটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্পবাচনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। অন্যটায় তৃতীয়। কেন্দ্রীয় নেতা রামমাধব পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব নেওয়ার পরে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে এখন বিশেষ নজর বিজেপি-র। অন্য দুই বিরোধী দল কংগ্রেস এবং তৃণমূলের অস্তিত্ব প্রায় মুছে দিয়ে মানিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধী শক্তি এখন তারাই।
বস্তুত, বাংলায় অতীতে বিরোধী দল তৃণমূলের আক্রমণাত্মক মেজাজ এবং সিপিএমের সাংগঠনিক কায়দা— এই দুই কৌশলকে কাজে লাগিয়ে এখন ত্রিপুরায় এগোতে চাইছে বিজেপি। যে কোনও অছিলায় সড়ক-রেল অবরোধ, থানা ঘেরাও করে এক দিকে প্রশাসনকে ব্যতিব্যস্ত রাখছে তারা। অন্য দিকে সিপিএমের মতো বুথ-ভিত্তিক সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে তৃণমূল স্তরে জমি আগলানোর জন্য। রাজ্য বিজেপি-র দাবি, মোট ৩১৭০ বুথের প্রায় ৮৬%-এ তারা পৌঁছতে পেরেছে সম্পর্ক অভিযান চালিয়ে। সংখ্যালঘু, ওবিসি, যুব, মহিলা মোর্চা— দলের সবক’টি গণসংগঠনকে নামানো হয়েছে ময়দানে।
সংগঠনের প্রাথমিক কাজ গুছিয়ে নেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস থেকে তৃণমূল ঘুরে আসা ৬ বিধায়ককে দলে টেনে বিধানসভাতেও আনুষ্ঠানিক ভাবে বিরোধী দলের স্বীকৃতি মিলে গিয়েছে। এ বার বিজেপি তাদের পরিচিত কায়দায় কেন্দ্রীয় নেতা ও ভিন্ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের এনে প্রচারে ঝড় তুলতে চাইছে। গুজরাতের ভোটপর্ব মিটে গেলে চলতি মাসেই আসার কথা দলের সভাপতি অমিত শাহের। জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অন্তত তিনটে সভা। উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ-সহ অন্যান্য রাজ্যের একাধিক মুখ আছে সম্ভাব্য সফরকারীর তালিকায়। এই মুহূর্তেই যেমন তিন দিনের সফরে রাজ্যে রয়েছেন বিজেপি মহিলা মোর্চার সর্বভারতীয় সভানেত্রী তথা ঔরঙ্গাবাদের মেয়র বিজয়া রাহতকর।
ত্রিপুরা জুড়ে গুঞ্জন, প্রচুর টাকা খরচ করে বাইক বাহিনী নামিয়েছে বিজেপি। সভা-সমাবেশে ভিড় বাড়াচ্ছে তরুণ ব্রিগেড। রাজ্য সভাপতির দায়িত্বে পৌঁনে দু’বছর যিনি আছেন, সেই বিপ্লব দেব নিজেও তরুণ। আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে তিনি বলছেন, ‘‘সিপিএমের আঞ্চলিক নেতা আর পঞ্চায়েতের মাথারা আছেন। কিন্তু তরুণ প্রজন্ম আমাদের সঙ্গে। সব বিরোধী ভোটকে আমরাই এখন এক জায়গায় আনতে চাইছি। উপজাতি এলাকার আইপিএফটি, আইএনপিটি-ও আসতে চাইছে বিজেপি-র সঙ্গে।’’ ওই সংগঠনগুলির সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত অবশ্য বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নেবেন।
বিপ্লবের বক্তব্য, তাঁরা ‘ভয়মুক্ত ত্রিপুরা’ গড়ার ডাক দিয়ে রাজ্য জুড়ে ‘পরিবর্তন যাত্রা’ শুরু করবেন। বিজয়ার ঘোষণা, মহিলাদের ‘লাঞ্ছনা’ থেকে মুক্তি দিতে পরিবর্তন চাই। পাঁচ বছর আগে ‘পরিবর্তন আসছে’ বলে কাউন্টডাউন ক্লক বসিয়ে সুদীপ রায়বর্মণেরা অবশ্য কংগ্রেসের পাট চুকিয়ে ফেলেছিলেন! বিজেপি-র ছাতায় ভাগ্য পরিবর্তন হবে?