— প্রতীকী চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে সরব বিজেপি। এ দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতেই মূল্যবৃদ্ধির হার মাত্রাছাড়া।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর, অর্থাৎ অর্থ বছরের প্রথম ছ’মাসে এক ডজন রাজ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার জাতীয় গড়ের থেকে বেশি ছিল। এর মধ্যে কংগ্রেস-শাসিত কর্নাটক ও বাম-শাসিত কেরল বাদে বাকি ১০টি রাজ্যেই বিজেপি ও এনডিএ ক্ষমতায়। এই তালিকায় রয়েছে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ, হিমন্তবিশ্ব শর্মার অসম, নীতীশ কুমারের বিহার, বিজেপি-শাসিত হরিয়ানা, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান, ত্রিপুরা, মণিপুর, ওড়িশা, ও অন্ধ্র। এই ছ’মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার সব থেকে বেশি ছিল ওড়িশা, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে। পশ্চিমবঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল জাতীয় গড়ের অনেক কম।
কোনও রাজ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার খুব বেশি, কোথাও বেশ কম দেখে অর্থ মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাজ্যওয়াড়ি মূল্যবৃদ্ধির হার বিশ্লেষণ করে তার কারণ খোঁজার চেষ্টা হবে। এ বিষয়ে কেন্দ্র কোনও পদক্ষেপ করতে পারে কি না বা রাজ্যগুলিকে কোনও পরামর্শ দিতে পারে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। আজ অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সুপারিশ করেছে, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির সঙ্গে মিলে মূল্যবৃদ্ধির হার গোটা দেশে মোটামুটি একই রকম রাখার চেষ্টা করুক।
কেন্দ্রীয় সরকার তথা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মূল্যবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশের আশেপাশে থাকলে তা সহনীয় বলে মনে করে। অর্থ মন্ত্রক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে জানিয়েছে, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর, এই ছ’মাসে মূল্যবৃদ্ধির জাতীয় গড় হার ছিল ৪.৬ শতাংশ। বঙ্গে এই ছ’মাসে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৩.৭%। এক ডজন রাজ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল জাতীয় গড়ের থেকে বেশি। ওড়িশায় মূল্যবৃদ্ধির হার এই ছ’মাসে ছিল সব থেকে বেশি, ৬.৩%। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিহারে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৬.২%। তৃতীয় স্থানে যৌথ ভাবে ছিল উত্তরপ্রদেশ ও হিংসা বিধ্বস্ত মণিপুর। দুই বিজেপি শাসিত রাজ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৫.৪%। দিল্লি ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বাদ দিলে রাজ্যগুলির মধ্যে এই ছ’মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার সব থেকে কম ছিল উত্তরাখণ্ডে।
অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্যপণ্য মজুত রাখা, প্রয়োজন মতো তা বাজারে ছাড়া, দেশের বাজারে খাদ্যের জোগান অব্যাহত রাখতে রফতানি, আমদানি নীতি নেওয়া, কালোবাজারি ও বেআইনি মজুতদারি বন্ধের মতো পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রশ্ন ছিল, কেন রাজ্যগুলির মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির হারে এত তারতম্য? উত্তরে অর্থ মন্ত্রক বিভিন্ন কারণের কথা বলেছে। এক, যে সব রাজ্যে খাদ্যশস্য উৎপাদন বেশি হয় না, সেখানে মূল্যবৃদ্ধির হার বেশি। কারণ খাদ্যশস্যের দামের সঙ্গে পরিবহণ, মজুতের খরচ যোগ হয়। দুই, এক-এক রাজ্যে কেনাকাটার ধরন এক-এক রকম। তিন, কর ও ভর্তুকির হার বিভিন্ন রকম হওয়ায় এক-এক রাজ্যে জ্বালানির দাম এক-এক রকম। চার, ভৌগোলিক এলাকা, জোগান ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজ্যের নীতির উপরেও এই হার নির্ভরশীল।