কোমর বেঁধেছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। ফাইল চিত্র।
বাইশের উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে জেতার জন্য শুধুমাত্র হিন্দুত্বের রাজনীতিই নয়, বিভিন্ন জাতের ছোট ছোট সম্প্রদায়ের মন জয় করার লক্ষ্যেও কোমর বেঁধেছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। তার মধ্যে রয়েছে দলিত বা তফসিলি জাতি, তফসিলি জনজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির ছোট ছোট গোষ্ঠী ও সংগঠনগুলি। রাজনৈতিক মহলের মতে, পিছড়ে বর্গের ভোট টানতে বিজেপি এতটাই মরিয়া যে ভোটের আগে নিজেদের নামের পাশে ‘জাঠভ’-এর (দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত) মতো জাতপরিচয়ের তকমা জুড়ে দিতেও দ্বিধা করছেন না দলের নেতানেত্রীরা।
উত্তরপ্রদেশের মোট ভোটদাতার ১০ শতাংশ জাঠভ এবং গত নির্বাচন পর্যন্ত তাঁরা বিএসপি নেত্রী মায়াবতীর পাশেই থেকেছেন। এবারের ভোটে সেই ভোটব্যাঙ্কের কিছুটা অংশ হলেও নিজেদের দিকে নিয়ে আসার চেষ্টায় রয়েছে বিজেপি। রাজনৈতিক শিবিরের মতে কাজটা সহজ নয়। বিএসপি নেত্রী যতই দুর্বল হোন না কেন,তাঁর এই জাঠভ বলয় এখনও অটুট। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, জাঠভ নন, এমন দলিতদের কিছু শতাংশকে যদি নিজেদের দিকে আনা যায় খুবই ভাল। না হলেও, জাঠভরা যদি এবারেও এসপি-র দিকে না ঝুঁকে মায়াবতীর কাছেই থাকে, তাতেও ক্ষতি নেই। এমনিতেই বিজেপির হিসাব অনুযায়ী বিএসপি-র এ বার তৃতীয় স্থান পাওয়ার কথা, তাও টিমটিম করে। ফলে বিএসপি থেকে বেরিয়ে সে দলের নেতা-কর্মীরা যাতে এসপি-র দিকে না যান (ইতিমধ্যেই গিয়েছেন অনেকে), সেটা নিশ্চিত করা জরুরি বিজেপির কাছে।
জাঠভদের মন জয়ের জন্য বিজেপি উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন রাজ্যপাল, দলিত নেত্রী বেবি রানী মৌর্য্যকে উত্তরপ্রদেশে নিয়ে এসেছে। তিনি নিজের নামের শেষে ‘জাঠভ’ শব্দটাও ব্যবহার করছেন। রাজ্যের ছ’টি অঞ্চলে তিনি দলিতদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। প্রতিটি জেলায় সফর করছেন। তিনি বলছেন, “গত দশ বছর ধরে আমার সম্প্রদায়ের মানুষ উপযুক্ত নেতা এবং একটি পোক্ত রাজনৈতিক দল খুঁজছেন। যে দল তাঁদের স্বশক্তিকরণ ঘটাতে পারবে। আমি তাঁদের কাছে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী এবং যোগী আদিত্যনাথের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি।” বিজেপি তফসিলি মোর্চার প্রধান দেবেন্দ্র সিংহ চৌধুরির বক্তব্য, “জাঠভরা বিএসপি-র কাছ থেকে কিছু পায়নি। এবং স্বভাবগত ভাবে তাঁরা এসপি-র সঙ্গেও খাপ খান না।”
জাঠভ-এর পাশাপাশি, অ-যাদব অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) ভোটারদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনেও ঝাঁপাচ্ছে বিজেপি। নিষাদ পার্টি এবং আপনা দলের সঙ্গে জোট বাঁধার
প্রয়াস তারই লক্ষণ বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করে মোদী যে ভোটের ডাক দিলেন, তার প্রধান ‘থিম’ ছিল ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ।’ সেখানেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দলিত, বঞ্চিত, পিছড়ে বর্গ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চায় বিজেপি। ভোটে জিতে এলে সবার জন্যই বিকাশের দরজা হাট করে খুলে দেওয়া হবে।
জেলা স্তরের বিজেপি নেতারা স্বীকার করছেন যে মধ্যবিত্ত মানুষ মূল্যবৃদ্ধির কারণে অখুশি। ফলে গ্রামের তৃণমূল স্তরে সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণ মূলক যোজনা যাতে ঠিকমতো পৌঁছে দিয়ে, পিছিয়ে থাকা জাতিবর্গকে খুশি করা যায়, তার চেষ্টা করছেন বিজেপি নেতারা। সূত্রের খবর, গ্রামীণ নির্বাচনী ক্ষেত্রগুলিতে জাতপাতের সমীকরণকে বিজেপির পক্ষে নিয়ে আসার কাজের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে গ্রামপ্রধানকে।