BL Santhosh

শোচনীয় হারে সন্তোষের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ তীব্র কর্নাটক বিজেপিতে, পদ নিয়েই উঠে গেল প্রশ্ন

দলের সব প্রথম সারির নেতার ম্যারাথন প্রচার এবং সভার পাশাপাশি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও কর্নাটক জয়ের লক্ষ্যে মরিয়া হয়ে সেখানে কার্যত মাটি কামড়ে পড়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২৩ ০৯:৪১
Share:

সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষের ভূমিকা এখন আতসকাচের নীচে। ফাইল চিত্র।

তিনি কর্নাটকের ভূমিপুত্র। একই সঙ্গে দলের সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কর্নাটকে বিজেপি জিতলে নিশ্চিত ভাবে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদারও হতেন তিনি। কিন্তু ভোটে শোচনীয় হারের পরে বিজেপির সেই সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষের ভূমিকা এখন আতসকাচের নীচে। গত ছ’মাসের মধ্যে প্রথমে দিল্লি পুরসভা এবং গত কাল কর্নাটকে বিজেপির শোচনীয় হারের পরে সন্তোষ দলে নিজের পদ বাঁচাতে পারেন কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

Advertisement

দলের সব প্রথম সারির নেতার ম্যারাথন প্রচার এবং সভার পাশাপাশি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও কর্নাটক জয়ের লক্ষ্যে মরিয়া হয়ে সেখানে কার্যত মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। একের পর এক সভা, র‌্যালি করেও সেখানে বিজেপির বিপর্যয় ঠেকাতে পারেননি মোদী। এই অবস্থায় ভোটের ফল প্রকাশের পরে বিজেপির প্রাথমিক ময়নাতদন্তে প্রথমেই উঠেছে সন্তোষের কথা। এ বারে কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট বণ্টনের দায়িত্বে মূলত সন্তোষই ছিলেন। অভিযোগ, নিজের ঘনিষ্ঠ কিছু নেতা ছাড়া টিকিট বণ্টনের প্রশ্নে কারও পরামর্শ শোনেননি তিনি। উপেক্ষা করেছেন দলের বর্ষীয়ান নেতাদের আবেদন। জগদীশ সেট্টার, লক্ষণ সাদাভির মতো ইয়েদুরাপ্পা-ঘনিষ্ঠ লিঙ্গায়েত নেতাকে টিকিট না দেওয়ার পিছনেও সন্তোষের হাত ছিল বলেই অভিযোগ। বিজেপির একটি অংশের অভিযোগ, লিঙ্গায়েত শিবিরের বড় মাপের নেতাদের টিকিট না দিয়ে আসলে ইয়েদুরাপ্পাকে রাজ্য রাজনীতিতে শক্তিহীন করে দেওয়ার কৌশল নিয়েছিলেন সন্তোষ। যা করতে গিয়ে আখেরে নিজেদের দীর্ঘদিনের ভোটব্যাঙ্ক লিঙ্গায়েত সমাজের বড় অংশের আস্থা হারিয়েছে বিজেপি। ফলে লিঙ্গায়েত জনগোষ্ঠীর অন্তত ৫ শতাংশের জনসমর্থন নিজেদের দিকে টেনে নিতে সক্ষম হয়েছে কংগ্রেস।

কর্নাটকের রাজনীতিতে লিঙ্গায়েত নেতা ইয়েদুরাপ্পা ও ব্রাহ্মণ নেতা সন্তোষের মধ্যে লড়াই বেশ পুরনো। সন্তোষ-ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ইয়েদুরাপ্পা কলকাঠি নেড়ে কার্যত রাজ্যছাড়া করেন সন্তোষকে। পরবর্তী সময়ে ইয়েদুরাপ্পা মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে মন্ত্রিসভার যে বিদ্রোহ হয়, তার পিছনে সন্তোষের সক্রিয় ইন্ধন ছিল বলেই মনে করা হয়। সব মিলিয়ে ইয়েদুরাপ্পার সঙ্গে সন্তোষের আদায়-কাঁচকলা সম্পর্কের প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক ভাবে ভোটের প্রস্তুতিতে। দুই নেতার ভিতরের দ্বন্দ্বের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ভোটের ফলেও।

Advertisement

মূলত কেন্দ্রীয় স্তরে দল ও সংগঠনের মধ্যে মসৃণ সম্পর্ক রাখাই হল দলের সাধারণ সম্পাদকের কাজ। কিন্তু অভিযোগ, তাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ সন্তোষ। কর্নাটকে বিজেপি ও সঙ্ঘের মধ্যে গোড়া থেকেই সমন্বয়ের অভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে। ভোট যত গড়িয়েছে, ততই প্রচারে তালমিলে অভাবের ছবি স্পষ্ট হয়েছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় স্তরের এক নেতার কথায়, ‘‘টিকিটবণ্টন নিয়ে মতভেদ তো ছিলই। তা ছাড়া প্রতিটি বিষয়ে নিজের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন সন্তোষ। অথচ দলের মধ্যে যে সমস্যাগুলি ছিল, সেগুলি একদম ‘মাইক্রো’ পর্যায়ে বা সমস্যার মূলে পৌঁছে সমাধানের চেষ্টা করা উচিত ছিল। কিন্তু তা-ও এড়িয়ে গিয়েছেন সন্তোষ। যার খেসারত এ বারের ভোটে দিতে হয়েছে বিজেপিকে।

গত ডিসেম্বরে দিল্লি পুরসভা হারের পরে বিজেপির অন্তর্তদন্তেও সন্তোষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সে সময়ও টিকিট বিলি থেকে প্রচার— সব কিছুই সন্তোষ নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন বলে ভোটে হারের পরে দলের অন্দরে অভিযোগ তুলেছিলেন দিল্লির বিজেপি নেতারা। তার ছয় মাসের মধ্যে কর্নাটকে হার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে সন্তোষের সাংগঠনিক দক্ষতা এবং সকলকে নিয়ে চলার ক্ষমতা নিয়ে। বিশেষ করে এক বছর পরেই লোকসভা নির্বাচন। এই অবস্থায় সন্তোষকে লোকসভা ভোট পর্যন্ত রেখে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনীতির অনেকের মতে, কর্নাটকে হারের দায় কেন্দ্রীয় স্তরে সন্তোষের ঘাড়ে চাপানোর কথা ভেবেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যাতে কর্নাটকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ব্যর্থতাকে আড়াল করা সম্ভব হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement