বাঁ দিক থেকে বিপ্লব দেব, নরেন্দ্র মোদী এবং শিবরাজ সিংহ চৌহান। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
প্রথম দফায় দেশের ১৯৫টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে লোকসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে দিল বিজেপি। মনে করা হচ্ছে, সব দলের আগে প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়েও বিরোধীদের থেকে কয়েক কদম এগিয়ে থাকতে চাইছে পদ্মশিবির। বিজেপির প্রথম তালিকায় স্থান পেয়েছেন ৩৪ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং দু’জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। দলের বর্তমান সাংসদদের মধ্যে আপাতত বেশ কয়েক জনের নাম বাদ গিয়েছে। যদি পরবর্তী তালিকায় তাঁদের নাম থাকেও, তবু পুরনো কেন্দ্র থেকে এ বার আর তাঁদের ভোটে লড়া হচ্ছে না।
২০১৪ সালে আম আদমি পার্টি (আপ)-র প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে হারিয়ে বারাণসীতে জিতেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৯ সালেও জয়ের ধারা অব্যাহত ছিল। এ বারও বারাণসী থেকেই লোকসভা ভোটে লড়ছেন বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ‘মুখ’। ২০১৪ এবং ২০১৯, পর পর দু’বার গুজরাতের গান্ধীনগর থেকে জিতে সাংসদ হয়েছেন মোদী মন্ত্রিসভার ‘নম্বর টু’ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এ বারও এই কেন্দ্র থেকেই ভোটে লড়ছেন তিনি।
গত দু’টি লোকসভার মতো এ বারেও উত্তরপ্রদেশের লখনউ আসনে বিজেপি প্রার্থী হচ্ছেন রাজনাথ সিংহ। ২০১৯ সালে কংগ্রেসের ‘দুর্গ’ অমেঠী আসনে রাহুল গান্ধীকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিলেন স্মৃতি ইরানি। অমেঠী থেকে ফের ভোটে লড়তে পারেন রাহুল, এই জল্পনার আবহে এ বারও স্মৃতিকেই প্রার্থী করল বিজেপি। সে ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পর ফের রাহুল-স্মৃতি দ্বৈরথ দেখা যেতে পারে অমেঠীতে।
২০০২ সাল থেকে মধ্যপ্রদেশের গুনা লোকসভা আসনে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে জয়ী হয়ে এসেছেন জ্যোতিরাদিত্য শিন্ডে। ২০১৯ সালে কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়িয়েই বিজেপি প্রার্থীর কাছে হেরে যান জ্যোতিরাদিত্য। পরে যোগ দেন বিজেপিতে। রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন তিনি। ফের পুরনো লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়তে চলেছেন জ্যোতিরাদিত্য। তবে এ বার বিজেপির টিকিটে। দলের তারকামুখ হেমা মালিনী গত দু’বারের মতো এ বারও উত্তরপ্রদেশের মথুরা কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতে চলেছেন। গত লোকসভায় প্রায় তিন লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন তিনি।
দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকেও এ বার লোকসভার টিকিট দিয়েছে বিজেপি। তাঁদের এক জন হলেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। অপর জন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। গত বছরের শেষে মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়াকে রুখে দিয়ে জয় পেয়েছিল বিজেপি। বিজেপির ধারাবাহিক জয়ের পিছনে অনেকেই সে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজকে কৃতিত্ব দিয়েছিলেন, যিনি রাজ্য রাজনীতিতে ‘মামা’ নামেই জনপ্রিয়। তার পরে যদিও শিবরাজকে আর মুখ্যমন্ত্রী করেনি দল। তখনই জল্পনা ছড়িয়েছিল যে, শিবরাজকে লোকসভায় জিতিয়ে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসতে চান মোদী। এ বার মধ্যপ্রদেশের বিদিশা আসন থেকে বিজেপির প্রার্থী হচ্ছেন তিনি। প্রসঙ্গত, আগে এই কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন প্রয়াত বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ। সুষমার কন্যা বাঁশুরি স্বরাজকে এ বার নয়াদিল্লি আসনে প্রার্থী করেছে বিজেপি। অন্য দিকে, একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করে সংবাদ শিরোনামে আসা বিপ্লব দেব মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি। মুখ্যমন্ত্রী পদে নতুন মুখ নিয়ে আসে বিজেপি। ২০২২ সালে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠায় দল। এ বার ত্রিপুরা পশ্চিম আসন থেকে লোকসভা ভোটের লড়াইয়ে নামতে চলেছেন তিনি।
কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে টক্কর দেখতে চলেছে দেশবাসী। সব কিছু ঠিক ভাবে চললে এই আসনে ফের শশী তারুরকেই প্রার্থী করতে চলেছে কংগ্রেস। বিদায়ী সাংসদ শশীর বিরুদ্ধে ওই আসনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখরকে টিকিট দিয়েছে বিজেপি। রাজীব বর্তমানে রাজ্যসভার সাংসদ।