প্রতীকী ছবি।
লোকসভা ভোটের আগের দু’বছরে রাজনৈতিক দলগুলি কর্পোরেট, ব্যবসায়িক সংস্থার থেকে ৯৮৫ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা চাঁদা পেয়েছে। তার মধ্যে ৯১৫ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা অর্থাৎ প্রায় ৯৩%-ই পেয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের সিন্দুকে জুটেছে মাত্র ৫৫.৩৬ কোটি টাকা, ৫.৬%। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর)-এর হিসেব বলছে, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮-তে জাতীয় দলগুলির মধ্যে কর্পোরেট সংস্থার চাঁদা তৃণমূল পেয়েছে ২.০৩ কোটি টাকা।
এই বিপুল চাঁদার কতটা বিদেশের, তার কোনও হিসেব নেই। নরেন্দ্র মোদীর জমানায় আইন বদলের ফলে সেই তথ্য এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২০১৮-র বাজেটের অর্থ বিলের মাধ্যমে বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা হয়েছে। এতে ১৯৭৬-এর পর থেকে বিদেশি অনুদান এসেছে কি না, তার পরীক্ষা থেকে রাজনৈতিক দলগুলি ছাড় পেয়েছে। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে রাজনৈতিক দলগুলির বিদেশ থেকে চাঁদা নেওয়ায় বাধা রয়েছে। ২০১৬-র বাজেটের অর্থ বিলে ঘুরপথে সেই রাস্তাও তৈরি করে দেওয়া হয়। বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে বলা হয়, সংস্থার বিদেশি মালিকানা ৫০%-এর কম হলে, তাদের চাঁদা বিদেশি সংস্থার বলে ধরা হবে না।
আইআইএম-আমদাবাদের প্রাক্তন অধ্যাপক, এডিআরের শীর্ষকর্তা জগদীপ চোখার বলছেন, ‘‘বিদেশি সংস্থাগুলি তাদের ভারতীয় শাখার মাধ্যমে দলগুলিকে চাঁদা দিচ্ছে। ফলে এর কতখানি বিদেশ থেকে আসছে, তা খতিয়ে দেখা খুবই কঠিন কাজ।’’
কিন্তু এর বিপদের দিকটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন জগদীপ। তাঁর কথায়, ‘‘এই চাঁদার কারণে রাজনৈতিক দল বিদেশি সংস্থার উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সেই দল পরে সরকারে এলে বা জোট সরকারের শরিক হলে প্রতিরক্ষা, শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে তা ঝুঁকির বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, সরকারি সিদ্ধান্ত দিনের শেষে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।’’
অরুণ জেটলি অর্থমন্ত্রী থাকা কালে অর্থ বিলের মাধ্যমে দু’বার গুরুত্বপূর্ণ আইনি পরিবর্তন ঘটালেও, কংগ্রেস বা অন্য কোনও দল প্রতিবাদ করেনি। কংগ্রেস-বিজেপি, দু’দলই বিদেশি চাঁদা নিয়ে আইন ভেঙেছে বলে দিল্লি হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল। দু’দলই এর বিরুদ্ধে একসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে যায়। জেটলি পরে আইন সংশোধন করায়, দু’দলই মামলা তুলে নেয়।
দেশীয় সংস্থা বা ব্যক্তির কাছ থেকে ২০ হাজার টাকার বেশি চাঁদা নিলে উৎস জানাতে হয়। ভোটের আগের দু’বছরে সব থেকে বেশি চাঁদা এসেছে কর্পোরেট সংস্থার ট্রাস্ট, কারখানা উৎপাদন ও আবাসন শিল্প থেকে।