—প্রতীকী ছবি।
সনাতন বিতর্কে দল সরব হওয়ায় ফল মিলেছে হাতেনাতে। নিচুতলায় হিন্দু ভোট মেরুকরণ হওয়ার ইঙ্গিত মেলায় ভবিষ্যতেও ধারাবাহিক ভাবে সনাতন বিতর্ককে উস্কে দিয়ে এক দিকে ইন্ডিয়া জোটকে আক্রমণ ও অন্য দিকে সংখ্যাগুরু মেরুকরণে সক্রিয় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের আক্রমণের মুল সুর— বিরোধীদের লক্ষ্যই হল ক্ষমতায় এসে সনাতনকে ধ্বংস করে দেশকে ভেঙে দেওয়া বলে প্রচারে গিয়ে সংখ্যাগুরু ভোটকে বিজেপির ছাতার তলায় নিয়ে আসা।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের ছেলে উদয়নিধির সনাতন ধর্ম প্রসঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্যের পরেই বিষয়টিকে প্রচারের হাতিয়ার করে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি। এতে রাজনৈতিক লাভ হতে পারে অনুমান করে ওই প্রচারকে ধীরে ধীরে তুঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বও। খোদ প্রধানমন্ত্রী প্রথমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ও গত কাল মধ্যপ্রদেশে প্রথম বার প্রকাশ্যে ওই মন্তব্যের সমালোচনা করে সরব হন। ডিএমকে নেতৃত্বকে কাঠগড়ায় তুলে সামগ্রিক ভাবে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটকেই আক্রমণ শানানোর কৌশল নেন প্রধানমন্ত্রী-সহ বিজেপি নেতৃত্ব। আজ প্রধানমন্ত্রীর দেখানো পথেই দেশের তিন প্রান্তে সনাতন প্রসঙ্গে ডিএমকে তথা বিরোধীদের হিন্দুত্ব-বিরোধী মনোভাব নিয়ে সরব হন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা এবং দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, অনুরাগ ঠাকুর।
বিজেপি নেতৃত্বের মতে, গত মাসে ওই মন্তব্য করেছিলেন উদয়নিধি। তার পর থেকে দল এ নিয়ে সরব রয়েছে। এতে ভোটমুখী ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে। মানুষ মনে করছে, কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোট ফিরে এলে অতীতের মতো সংখ্যালঘু তোষণ শুরু হবে দেশ জুড়ে। সেই কারণে সংখ্যাগুরু সমাজের মধ্যে ওই বিতর্ককে কেন্দ্র করে মেরুকরণের আবহাওয়া তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এ দিন বলেন, ‘‘ডিএমকের এক জন মন্ত্রী ওই কথা বলা সত্ত্বেও ইন্ডিয়া জোটের কোনও নেতাকে সরাসরি বিরোধিতা করতে দেখা যায়নি। আসলে সনাতন-বিরোধিতা ডিএমকের দলীয় নীতি। তাতে ইন্ডিয়া জোটের অন্য দলগুলির সমর্থন রয়েছে।’’
সনাতন বিতর্ক জোটের জন্য ক্ষতিকর বুঝতে পেরেই ডিএমকের ওই মন্তব্য কংগ্রেস বা তৃণমূলের মতো দলগুলি জানিয়ে দেয়, তারা ওই বক্তব্য সমর্থন করে না। সম্প্রতি শরদ পওয়ারের বাড়িতে হওয়া বৈঠকে দ্রুত ওই বিতর্ক থামাতে বার্তা দেওয়া হয় স্ট্যালিনকেও। ক্ষত মেরামতিতে ডিএমকে নেতৃত্ব গত কাল নিজেদের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রীকে মাঠে নামায়। কিন্তু তাতেও বিজেপির আক্রমণ থামেনি। আজ ছত্তীসগঢ়ের একটি জনসভায় বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা বলেন, ‘‘ডিএমকে নেতারা সনাতন ধর্মকে রোগের সঙ্গে তুলনা করা সত্ত্বেও কংগ্রেসের সনিয়া ও রাহুল গান্ধী নীরব। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে সনাতনকে আক্রমণ করাই হল বিরোধী জোটের উদ্দেশ্য।’’ ডিএমকের ওই বক্তব্য প্রসঙ্গে কংগ্রেসের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আজ রাজস্থানে সরব হন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘‘ইন্ডিয়া জোটের নেতারা সনাতন ধর্মকে ধ্বংস করতে উদ্যোগী হয়েছেন, আর রাহুল গান্ধী তাঁদের ঘৃণার দোকান খোলার শংসাপত্র দিয়েছেন।’’ তাঁর অভিযোগ সনাতন বিরোধিতা করে দেশ জুড়ে হিংসা ও ঘৃণার বাতাবরণ তৈরি করছে ইন্ডিয়া জোট।