প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে মাথা ঠেকালেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সিংহ সাইনি। বৃহস্পতিবার হরিয়ানার পঞ্চকুল্লায় শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে। ছবি: পিটিআই।
শুধু জিতলেই হবে না। সেই জয়ের বিক্রম যাতে সাধারণ মানুষের সামনে বড় ভাবে তুলে ধরা যায়, তার জন্য পরের দিন থেকেই কোমর বাঁধতে হবে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, গত দশ বছর এই নীতি নিয়েই চলেছেন বিজেপির তারকা প্রচারক তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজও তার ব্যতিক্রম হল না। চব্বিশের লোকসভায় আশানুরূপ ফলাফল না হওয়ায় কিছুটা মনোবল ভেঙেছিল বিজেপির। কিন্তু এ বার হরিয়ানা বিধানসভায় অপ্রত্যাশিত ভাবে জয়লাভের পরে মোদীর দল চাঙ্গা। তাই শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চ হিসেবেই আজ হরিয়ানা মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকে তুলে ধরলেন মোদী-অমিত শাহেরা। হরিয়ানার পঞ্চকুলার শালিমার গ্রাউন্ডে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে নায়েব সিংহ সাইনির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান কার্যত পরিণত হল এনডিএ সরকারের শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চে।
দলিতদের ইতিবাচক বার্তা দিতেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল বাল্মীকি জয়ন্তীর দিনটিকে। উপস্থিত ছিলেন মোদী, শাহ, রাজনাথ সিংহ-সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। ছিলেন এনডিএ-র সব মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রীরা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজই সন্ধ্যায় চণ্ডীগড়ে প্রধানমন্ত্রী বসলেন এনডিএ-র মুখ্যমন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে। চব্বিশের লোকসভায় জয়ের পরে এই ধরনের বৈঠক এই প্রথম। মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে আসন্ন নির্বাচনের আগে এই মন্থনকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
হরিয়ানার নতুন সরকারের শপথ স্থগিত রাখার আবেদন জানিয়ে একটি মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ তা খারিজ করে দেয়। বুধবার পঞ্চকুলাতেই বিজেপির নবনির্বাচিত পরিষদীয় দলের বৈঠকে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহ এবং মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব। ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরও। ওই বৈঠকেই সর্বসম্মত ভাবে বিজেপির বিধায়ক দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন সাইনি। আজ দ্বিতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি শপথ নেওয়ার পরে শালিমার গ্রাউন্ডে রাজ্যপাল বন্দারু দত্তাত্রেয়র কাছে শপথবাক্য পাঠ করেন অনিল ভিজ, কৃষ্ণলাল পানওয়ার-সহ ১২ জন বিজেপির মন্ত্রী। প্রায় ৫০ হাজার দর্শকের হর্ষধ্বনি এবং স্লোগানের মধ্যে চলে শপথ। সাইনির মন্ত্রিসভায় জাতপাত, সম্প্রদায় থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ, সব ক্ষেত্রেই ভারসাম্য রাখার চেষ্টা হয়েছে। দলিত, ওবিসি, জাঠ, রাজপুত, পঞ্জাবি, বানিয়া, ব্রাহ্মণ— প্রত্যেক গোষ্ঠীরই প্রতিনিধিত্ব রয়েছে মন্ত্রিসভায়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বংশীলালের নাতনি শ্রুতি চৌধরি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাও ইন্দ্রজিৎ সিংহের মেয়ে আরতি রাও মন্ত্রী হয়েছেন।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, আজ রাতে এনডিএ-র বৈঠকের কেন্দ্রে যেমন রাখা হয়েছে উন্নয়নের বিভিন্ন দিককে, তেমনই কংগ্রেস আমলের জরুরি অবস্থার পঞ্চাশ বছর পূর্তিকে ‘গণতন্ত্র হত্যার চেষ্টার পঞ্চাশ বছর’ হিসেবে গোটা দেশে প্রচারের পরিকল্পনাও স্থির করা হয়েছে। ভোটমুখী দুই রাজ্যে ঝড় তোলার প্রস্তুতি ও কৌশল নিয়ে এনডিএ-র মুখ্যমন্ত্রীরা তথা বিভিন্ন দলের নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছেন মোদী। নিজেও কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
মোদী ছাড়়াও এই বৈঠকে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন তাঁর মন্ত্রিসভার অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ, জে পি নড্ডা। নড্ডা বলেন, ‘‘শুধু বিজেপি নয়, এনডিএ পরিবারের সব দলই যাতে এগিয়ে যেতে পারে, সেই লক্ষ্যেই সবাইকে নিয়ে আলোচনা।’’ এনডিএ শরিক অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দে, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওন্ত-রাও নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন বৈঠকে। আজ মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা নব্য এনসিপি-র নেতা অজিত পওয়ারও এই বৈঠকে ছিলেন। ফলে উপস্থিতি ছিল মহারাষ্ট্রের শাসক জোটের সম্পূর্ণ শীর্ষ নেতৃত্বেরই। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, হরিয়ানার ভোটের পরে জয়ের যে ভরবেগ তৈরি হয়েছে, তা ব্যাহত হতে দিতে চান না মোদী। ভোটমুখী দুই রাজ্যেই বিজেপির শরিক নির্ভরতা রয়েছে। তাই এ দিন এক দিকে মোদী প্রকাশ্যে এনডিএ-র সবাইকে এক মঞ্চে এনে শক্তি প্রদর্শন করেছেন। অন্য দিকে, জোটের ভিতরের বন্ধনও দৃঢ় করার লক্ষ্যে বসেছেন বৈঠকে।