আগের সরকারের শরিক এনপিপি এ বার মণিপুরে সরকার গড়তে পারে বলে দাবি করেছিলেন জাতীয় সভাপতি তথা মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা। কিন্তু তাদের লড়াই থেমে গেল মাত্র ৭ আসনেই। বিজেপি আগেই বলেছিল, ফল প্রকাশের পরেও তারা এনপিপির সঙ্গে জোট গড়বে না।
ফাইল চিত্র।
ভোটের আগেই আত্মবিশ্বাসী বিজেপির দাবি ছিল, আর জোটের দরকার হবে না। অন্তত ৪০টি আসনে জিতে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে একাই সরকার গড়তে পারবে তারা। ভোট পরবর্তী সমীক্ষাতেও ইঙ্গিত ছিল বিজেপি ৩০-এর বেশি আসন পাবে। শেষ পর্যন্ত হলও তাই। মণিপুরে সরকার গড়ছে বিজেপি। গত বারের মত জোড়াতালি সরকার নয়। স্পষ্ট জনমত নিয়ে মণিপুরে প্রথম বার একাই সরকার গড়ছে তারা।
৬০ আসনের মণিপুর বিধানসভা ভোটে বিজেপির দখলে এল ৩২টি আসন। জেডিইউ ৬টি, কংগ্রেস ৫টি, এনপিপি ৭টি, এনপিএফ ৫টি, কেপিএ ২টি ও নির্দল প্রার্থী ৩টি আসনে জিতেছে।
আজ সকালে ভোট গণনা শুরুর পরে নতুন বস্ত্র, উত্তরীয় পরে গোবিন্দজির মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রার্থনা করেন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহ। দুপুরের মধ্যেই হেইগাং থেকে সাড়ে ৭৮ শতাংশ ভোট পেয়ে রেকর্ড ব্যবধানে তাঁর জয়ের খবর আসে। সন্ধ্যায় ফল ঘোষণা শেষ হওয়ার আগেই বীরেন সিংহ টুইটে বিজেপির জয়ের কথা ঘোষণা করে লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মণিপুরের মানুষের আস্থার প্রমাণ এই ঐতিহাসিক জয়। এ বার জনতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ মণিপুর গঠনের উদ্দেশ্যে পা মেলাবে বিজেপি।’ আরও বলেন, ‘নতুন সরকার কেন্দ্রের উপরে আফস্পা প্রত্যাহারের জন্য চাপ বাড়াবে। সমতলের সঙ্গে পাহাড়েরও পাল্লা দিয়ে উন্নয়নের কাজ চলবে।’
মণিপুরে এ বার রেকর্ড ৮৯.৩ শতাংশ ভোট পড়েছিল। ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৩৬টিতেই ভোট পড়েছে ৯০ শতাংশের বেশি। ভোট প্রচার ও ভোট চলাকালীন সংঘর্ষে তিন জনের প্রাণ গিয়েছে, জখম বহু। তাই আজ গণনার দিনে কড়া সতর্কতা ও নিরাপত্তা ছিল রাজ্য জুড়ে। গণনার আগের দিনেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় একটি খবর, যেখানে বলা হয় অনেক ইভিএম থেকে মক পোলিংয়ের তথ্য না মুছেই ফের ভোট হয়েছে। কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হয়, ভোটে কুকি জঙ্গি সংগঠনগুলি খোলাখুলি বিজেপির হয়ে বুথ দখল, রিগিং, ভোট দেওয়ার কাজ চালিয়েছে। তাই কুকি এলাকাগুলিতে ভোট হয়েছে একতরফা।
প্রথম রাউন্ডে অবশ্য বিজেপি-কংগ্রেসে লড়াই চলেছে হাড্ডাহাড্ডি। কিন্তু বেলা বাড়তে লড়াই থেকে ছিটকে যায় কংগ্রেস। এমনকি মণিপুরে সব চেয়ে বেশি দিন শাসন চালানো কংগ্রেসের স্থান এখন রাজ্যে সদ্য লড়তে আসা জেডিইউয়েরও নীচে! গত বার ২৮ আসন পেয়ে বৃহত্তম দল হয়েছিল কংগ্রেস। এ বারে রাত পর্যন্ত তারা মাত্র ৫টি আসন পেয়েছে। নির্বাচনের আগে থেকেই কংগ্রেসের দুর্বলতা প্রকট ছিল। ভোটপ্রচারের মধ্যেই ভারতের অখণ্ডতা বোঝাতে রাহুল গান্ধী যে ভাবে ভারতের পূর্ব সীমা পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত লিখে টুইট করেন— তাতে কংগ্রেস আরও বড় ধাক্কা খায়। ভোট প্রচারেও এআইসিসি-র তরফে তেমন গুরুত্ব চোখে পড়েনি।
আগের সরকারের শরিক এনপিপি এ বার মণিপুরে সরকার গড়তে পারে বলে দাবি করেছিলেন জাতীয় সভাপতি তথা মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা। কিন্তু তাদের লড়াই থেমে গেল মাত্র ৭ আসনেই। বিজেপি আগেই বলেছিল, ফল প্রকাশের পরেও তারা এনপিপির সঙ্গে জোট গড়বে না। ভোটের আগে বিজেপি একাই সরকার চালানোর ঘোষণা করলেও বীরেন রাতে বলেন, “নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও বিজেপি সমমনস্ক দলগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলতে তৈরি। কিন্তু এনপিপি-র বাদ।” অপর জোট শরিক এনপিএফ একলা লড়লেও ৫টি আসনে জিতেছে। তারা নতুন সরকারেও বিজেপিকে সমর্থন জানাবে। নতুন কুকি সংগঠন কেপিএ দু’টি আসনে জিতে চমকে দিয়েছে।