(বাঁ দিক থেকে) পার্বতী পরিদা, মোহন মাঝি এবং কণকবর্ধন সিংহদেও। — ফাইল চিত্র।
ওড়িশার নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কেওনঝড়ের চার বারের বিধায়ক মোহনচরণ মাঝিকে বেছে নিলেন বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব! সেই সঙ্গে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হচ্ছে পার্বতী পরীদা এবং কণকবর্ধন সিংহদেওকে। মঙ্গলবার বিকেলে দলের দুই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক রাজনাথ সিংহ এবং ভূপেন্দ্র যাদবের উপস্থিতিতে নবনির্বাচিত বিজেপি বিধায়কদের বৈঠকে তাঁদের নাম ঘোষণা করা হয়।
৫২ বছরের আদিবাসী নেতা মোহন গত আড়াই দশক ধরে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। সৎ এবং পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির পাশাপাশি আগ্রাসী মেজাজের জন্যেও তিনি পরিচিত। গত বছর বিধানসভা অধিবেশন চলাকালীন বিজেডি সরকারের খাদ্যশস্য দুর্নীতির প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে স্পিকারের আসনে ডাল ছুড়ে তিনি সাসপেন্ড হয়েছিলেন।
ওড়িশা বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি কণকবর্ধন (কেভি নামে যিনি সে রাজ্যের রাজনীতিতে পরিচিত) ১৯৯৫ থেকে টানা পাঁচ বার বোলাঙ্গিরের পটনাগড় কেন্দ্রের বিধায়ক হয়েছেন। তিনি বোলাঙ্গিরের রাজ পরিবারের সন্তান। অন্য দিকে, পার্বতী পুরী জেলার নিমাপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেডির প্রভাবশালী বিদায়ী বিধায়ক সমীররঞ্জন দাসকে হারিয়ে এ বারই প্রথম নির্বাচিত হয়েছেন।
রবিবার ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং জুয়েল ওরাওঁ রাষ্ট্রপতি ভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ওড়িশার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে জল্পনায় ছিল পাঁচ জনের নাম। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কেভির নাম নিয়ে আলোচনা চললেও সেই তালিকায় ছিল না মোহনের নাম। গত বছর রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তীসগঢ়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এ ভাবে চমক দেখিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দল। জল্পনার বৃত্তের বাইরে থাকা ভজনলাল শর্মা, মোহন যাদব, বিষ্ণুদেও সাইদের বেছে নিয়ে।
লোকসভার পাশাপাশি এ বার ওড়িশায় বিধানসভা ভোটও হয়েছিল। সে রাজ্যের ২১টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২০টি গিয়েছে ‘পদ্মে’র ঝুলিতে। নবীনের বিজেডি শূন্য! কংগ্রেস একটি আসনে জিতেছে। পাশাপাশি, ১৪৭ আসনের ওড়িশা বিধানসভায় ৭৮টিতে জিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে পদ্ম। বিজেডি ৫১ এবং কংগ্রেস ১৪টিতে জিতেছে। অন্যেরা চারটিতে। ২৪ বছরের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের দল বিজেডি-কে পরাস্ত করে এ বারই প্রথম ভুবনেশ্বরের কুর্সি দখল করেছে বিজেপি।
রবিবার ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং জুয়েল ওরাওঁ রাষ্ট্রপতি ভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ওড়িশার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র, রাজ্য সভাপতি মনমোহন শামল এবং বিধায়ক সুরেশ পূজারির নাম ছিল জল্পনার কেন্দ্রে। সম্বিত এ বার পুরী লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতেছেন। কিন্তু শামল চাঁদবালি বিধানসভা কেন্দ্রে হেরে গিয়েছেন বিজেডি প্রার্থীর কাছে।
এই পরিস্থিতিতে বরগড়ের বিদায়ী সাংসদ তথা ব্রজরাজনগরের সদ্যনির্বাচিত বিধায়ক সুরেশ মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন বলে দলের একাংশ মনে করছিলেন। ওড়িশা রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে পরিচিত ‘পিডিএস (পণ্ডা-দেও-সারঙ্গি) ফ্যাক্টর’-এর কথা মাথায় রেখে বিজেডি প্রধান নবীন পট্টনায়েকের প্রাক্তন ‘ডানহাত’ বৈজয়ন্ত (জয়) পণ্ডার নামও বিজেপি হাইকমান্ডের বিবেচনায় ছিল বলে ‘খবর’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পদ্মশিবির দলের শক্ত ঘাঁটি পশ্চিম ওড়িশার নেতা মোহনকেই বেছে নিল।