এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয় দফার মন্ত্রিসভায় কে কোন দায়িত্ব পাবেন, তা তখনও চূড়ান্ত নয়। ব্যতিক্রম শুধু এক জন। তিনি এস জয়শঙ্কর, যিনি ‘বাস্তববাদী কূটনীতিক’ হিসাবে গত এক দশকে চিহ্নিত হয়েছেন মোদী সরকারের অন্দরমহলে। গত কাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পরেই প্রধানমন্ত্রী তাঁকে দায়িত্ব দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ়্জ়ু, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতা, বাণিজ্যবৃদ্ধি নিয়ে সোমবার সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বসতে। আজ সকালে বৈঠকগুলি তিনি সারলেন যখন, তখনও সরকারি ভাবে বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পাননি জয়শঙ্কর। আগামী ১৪ তারিখ প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে জি-৭ বৈঠকে যোগ দিতে ইটালি যাওয়ার কথা জয়শঙ্করের।
মোদী যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী, তখন থেকেই তাঁর পরম আস্থাভাজন জয়শঙ্কর। মোদী দিল্লির কুর্সিতে বসার পরের বছরই বিদেশসচিব পদে নিযুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশনীতির অঘোষিত পরামর্শদাতা হয়ে উঠেছিলেন জয়শঙ্কর। দেশের সব চেয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিদেশসচিব (২০১৫ থেকে ২০১৮) মনমোহন সরকারেও ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাতেই। ভারত-আমেরিকা অসামরিক পরমাণু চুক্তির জন্য যে কূটনীতিক দল কাজ করেছিল, তার অন্যতম ছিলেন আজকের বিদেশমন্ত্রী। মোদীর দ্বিতীয় দফায়, কোভিড কূটনীতি থেকে কোয়াড, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে ভারসাম্য, আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেও রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল আমদানি চালিয়ে যাওয়ার মতো কাজ করে গিয়েছেন তিনি। বার বার গলা তুলেছেন পশ্চিমের কটাক্ষের সামনে।
আজ মলদ্বীপের প্রেসিডন্টের সঙ্গে জয়শঙ্করের বৈঠকটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সংঘাত এখনও টাটকা। ভারত-মলদ্বীপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন ভাবে তলানিতে নেমে যাওয়ার পরে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্টের ভারতে আসাটাই ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। গত বছর ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারের ভিত্তিতে নির্বাচিত চিনপন্থী মুইজ়্জ়ু ক্ষমতায় এসেই মলদ্বীপে মোতায়েন ভারতীয় সেনাদের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী সেনা প্রত্যাহারে বাধ্য হয় নয়াদিল্লি। আজ তাঁর সঙ্গে বৈঠকের পর নিজের এক্স হ্যান্ডলে জয়শঙ্কর লেখেন, ‘আজ মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ়্জ়ুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে আমি আনন্দিত। ভারত ও মলদ্বীপ একসঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করার প্রত্যাশা করি।’ রবিবার রাতে রাষ্ট্রপতি ভবনের নৈশভোজে মুইজ়্জ়ুকে মোদীর পাশে বসতে দেখা গিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পরে একই ধরনের পোস্টে জয়শঙ্কর বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী এগিয়ে যাচ্ছে।’ বাংলাদেশের এক জন কর্মকর্তা বৈঠকটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, উভয় পক্ষের সার্বিক সম্পর্ক পর্যালোচনা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া-সহ অন্যরাও উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত রবিবার শপথের পরে মোদীর সঙ্গে ঘরোয়া আলাপচারিতা হয়েছে শেখ হাসিনার। উপস্থিত ছিলেন তার কন্যা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। আলোচনায় দুই প্রধানমন্ত্রী দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। গত কাল রাতে শপথ গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতি ভবনে সফররত বিদেশি নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন মোদী। পরে বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মোদী তাঁর ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির বিষয়টি তাঁদের কাছে তুলে ধরেছেন।।