ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। ফাইল চিত্র।
ভুবনেশ্বরে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজু জনতা দলের নেতা তথা ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু সেই বিজু জনতা দলই ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিনের ডাকে সামাজিক ন্যায় নিয়ে বিরোধী নেতাদের সম্মেলন এড়িয়ে যাচ্ছে। সংসদ অধিবেশনের পরে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেও বিরোধী দলগুলির প্রধানদের নিয়ে বৈঠকে বসার পরিকল্পনা করছেন। কংগ্রেসও সেই বৈঠকে বিজু জনতা দলকে ডাকতে চাইছে না। কারণ, কংগ্রেসের মতে, নবীন পট্টনায়ক মোদী সরকার বা বিজেপির বিরুদ্ধে বাকিদের সঙ্গে একজোট হবেন না। তিনি বিজেপির সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’-এর নীতি নিয়ে চলছেন।
স্ট্যালিন সামাজিক ন্যায় বিষয়ক সর্বভারতীয় ফেডারেশনের পক্ষ থেকে সমস্ত বিরোধী দলের নেতাদের আলোচনা সভায় আহ্বান জানিয়েছেন। মূলত ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই আলোচনা সভার বিষয় হবে সামাজিক ন্যায় নিয়ে জাতীয় স্তরে যৌথ কর্মসূচি গড়ে তোলা। প্রাথমিক ভাবে বিজু জনতা দলের রাজ্যসভা সাংসদ সস্মিত পাত্র সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। তৃণমূলের নেতারা একে নবীনের সঙ্গে মমতার দৌত্যের সুফল হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু নবীন পট্টনায়কের দল শেষ মুহূর্তে পিছু হটেছে। দলের কেউই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না। কংগ্রেসের তরফে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত সম্মেলনে যোগ দেবেন।
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, সংসদের অধিবেশন চলাকালীন মল্লিকার্জুন খড়্গে বিরোধী দলের প্রধানদের বৈঠকে ডাকবেন। রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের প্রতিবাদে ১৯টি দল এককাট্টা। তাদের মধ্যে তৃণমূল, আম আদমি পার্টি, ভারতীয় রাষ্ট্র সমিতিও রয়েছে। এই দলগুলির প্রধানদের বৈঠকে ডাকা হবে। সেখানেই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের জন্য বিরোধী ঐক্যের প্রাথমিক সলতে পাকানো হবে। বিজু জনতা দল, জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেসকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা নেই।নবীনের মতো জগন্মোহনের দলেরও কেউ স্ট্যালিনের ডাকা সম্মেলনে যাচ্ছেন না। খড়্গের বৈঠকেও ডাকা হলে জগন্মোহন আসবেন না বলেই কংগ্রেস নেতৃত্বের মত। কারণ, তা হলে পরের দিন সিবিআই বা ইডি জগন্মোহনের বাড়িতে পৌঁছে যাবে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, স্ট্যালিনের সম্মেলনে নীতীশ কুমারের জেডিইউ-রও কেউ থাকছেন না।
একইভাবে বিজু জনতা দল সম্পর্কে কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, আগামী বছর ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেই ওড়িশার বিধানসভা ভোট বলে নবীন রাজ্য স্তরে বিজেপির সঙ্গে সংঘাতে যাবেন। কিন্তু তিনি জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোটে থাকবেন না। কংগ্রেস নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মমতার সঙ্গে বৈঠকের পরেও নবীন মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে বিজেপি বিরোধী জোট নিয়ে কোনও কথা হয়নি।
গত সপ্তাহে খড়্গে তাঁর বাড়িতে বিরোধী দলের নেতাদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানে সনিয়া-রাহুলের উপস্থিতিতে আম আদমি পার্টি, বিআরএস, এসপি, জেডিইউ, আরজেডি, সিপিএমের সাংসদরা খড়্গেকে বিরোধী দলের প্রধানদের নিয়ে বৈঠকে বসার পরামর্শ দেন। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, সংসদের অধিবেশন শেষ হলে ধীরেসুস্থে এই বৈঠকের বিষয়ে পরিকল্পনা করা হবে। বৈঠকে যাতে সকলে উপস্থিত থাকেন, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা হবে। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীওয়াল বা অখিলেশ যাদবের মতো কেউ বৈঠকে যোগ না দিলে বিজেপি সেটিকেই অস্ত্র করবে।
ওই বৈঠকে বিএসপি নেত্রী মায়াবতীকেও আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। তবে তিনিও আসবেন না বলেও কংগ্রেস নেতাদের ধারণা। দলের এক নেতা বলেন, ‘‘সংসদে খড়্গের ঘরে প্রতিদিন সকালে বিরোধী দলগুলির বৈঠকেও বিএসপি-কে ডাকা হয়। রাজ্যসভার সাংসদ জয়রাম রমেশ নিজে বিএসপি-র দানিশ আলির সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু কেউই বৈঠকে আসেনি।’’