তাণ্ডবের ক্ষতে প্রলেপ, মানিক-দুয়ারে বিপ্লব

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে কাল, শুক্রবার বেলা ১২টায় ত্রিপুরার নবতম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন বিপ্লব কুমার দেব।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

আগরতলা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৮ ০৩:৪৮
Share:

আলোচনা: সিপিএমের রাজ্য দফতর দশরথ দেব ভবনে মানিক সরকার, রাম মাধব এবং বিপ্লব দেব। বৃহস্পতিবার আগরতলায়। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী

পুরনো সাম্রাজ্যের ভগ্নস্তূপের উপরে দাঁড়়িয়ে নতুন জমানার অভিষেক হচ্ছে! পরিবর্তনের ধাক্কায় পাথরের লেনিন থেকে ইট-কাঠের পার্টি অফিস উপড়়ে যাচ্ছে একের পর এক! এই অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ ঘিরে দেশ জোড়া হইচইয়ের মাঝেই সৌজন্যের অস্ত্রে বিতর্ককে ঘায়েল করার প্রয়াস নিল বিজেপি।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে কাল, শুক্রবার বেলা ১২টায় ত্রিপুরার নবতম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন বিপ্লব কুমার দেব। তার ঠিক আগের রাতে উত্তর-পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবকে সঙ্গে করে সটান সিপিএমের রাজ্য দফতর দশরথ দেব ভবনে চলে এলেন ভাবী মুখ্যমন্ত্রী! বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার আজ সকালেই তাঁর সরকারি আবাস ছেড়ে সস্ত্রীক উঠে এসেছেন এই পার্টি অফিসের তিন তলায়। নতুনের আগমনের খবর পেয়ে নীচে নেমে এলেন প্রবীণ। হাত ধরে নিয়ে গেলেন উপরে।

ত্র্রিপুরার অনেক বছরের রেওয়াজ, নতুন মন্ত্রিসভার শপথের দিনে বিরোধীরা কেউ হাজির হন না। এ বার ২৫ বছর পরে পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য জুড়ে সিপিএমের দফতর ভাঙার যে অভিযোগ উঠছে, তার প্রেক্ষিতে শপথ বয়কটের ভাবনা ছিল মানিকবাবুদেরও। কিন্তু তাতে জলই ঢেলে দিলেন প্রায় বিপ্লব-রাম মাধব! মুখোমুখি বসে আপ্যায়ন করে যাওয়ার পরে ঠিক হয়েছে, সিপিএমের দুই নির্বাচিত, বর্ষীয়ান বিধায়ক মানিক ও বাদল চৌধুরী এবং দুই সাংসদ শঙ্করপ্রসাদ দত্ত ও জিতেন্দ্র চৌধুরী কাল অসম রাইফেলসের মাঠে নতুন জমানা সূচনার সাক্ষী থাকতে যাবেন। স্বয়ং বিপ্লবের কথায়, ‘‘আমি আগেই বলেছিলাম, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য চাই। আমন্ত্রণ করতে এলসেছিলাম শুভ অনুষ্ঠানের জন্য। উনি কথা দিয়েছেন, আসবেন।’’ মানিকবাবুও ভাবী মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি ‘কৃতজ্ঞতা’ জানিয়েছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: নাগাল্যান্ডে চতুর্থ বার মুখ্যমন্ত্রী নেফিয়ু রিও

বিপ্লব অবশ্য অনুগত সৈনিকের মতো নিখুঁত অভিনয়টা করে গেলেন শুধু! নেপথ্যে চিত্রনাট্য রচয়িতার নাম? অমিত ভাই শাহ! শপথের আগের দিন আগরতলা পৌঁছে তিনি খবর পেয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং বিজেপি সভাপতির হুঁশিয়ারির পরেও ত্রিপুরায় পরাজিতের প্রতি আক্রোশ বন্ধ হয়নি। উদয়পুরের কিলায় বৃহস্পতিবার রাতে সিপিএমের দফতর দাউদাউ পুড়়ে যাওয়ার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আগুনের মতোই ছড়িয়েছে। শাহই এখানে রাম মাধব, সুনীল দেওধর এবং বিপ্লবকে ডেকে নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন, মানিকবাবুদের কাছে গিয়ে কথা বলার জন্য। ঠিক সেটাই করে এসেছেন বিপ্লবেরা।

পার্টি অফিসের আলোচনায় মানিকবাবু এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর তথ্য দিয়ে দাবি করেছেন, ফলপ্রকাশের পর থেকে জারি থাকা তাণ্ডব বন্ধ করতে হবে। বিপ্লবেরা আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।

তার আগে নির্বাচন কমিশনের সিইও-র কাছে গিয়েও সিপিএম দাবি করেছে, চড়়িলামের দলীয় প্রার্থীই এলাকাছাড়া! ওখানে ১২ তারিখের ভোট পিছনো হোক। সিইও শ্রীরাম তরনী কান্ত বলেছেন, অভিযোগ যাচাই করবেন। প্রার্থীকে নিরাপত্তাও দেওয়া হবে।

এত সব তিক্ততায় আপাতত প্রলেপ অবশ্য অমিতের পরামর্শে বিপ্লবের দৌত্য!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement