মনীষা দুবে
‘জাতীয় সঙ্গীত হবে। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি একটু...।’
অনুষ্ঠানের শেষে ধন্যবাদজ্ঞাপন বক্তব্য সমাপ্ত হতেই দরজার দিকে সটান হাঁটা দিয়েছিলেন অমিত শাহ। পিছনে আমলা-সান্ত্রীরা। তখনই পিছন থেকে অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা মনীষা দুবে বলেন, ‘‘জাতীয় সঙ্গীত হবে। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি একটু দাঁড়িয়ে যান।’’
দিল্লি নির্বাচনে আপের কাছে উড়ে গিয়েছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দল। কিন্তু মঙ্গলবার ফল প্রকাশের পর গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি অমিতকে। যাননি মন্ত্রকে। দু’দিন অন্তরালে থাকার পর আজই প্রথম বিজ্ঞান ভবনে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলির মঞ্চ ‘বিমস্টেক’-এর মাদক পাচাররোধ সংক্রান্ত অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে উপস্থিত থাকলেন অমিত। সূচি অনুযায়ী বিজ্ঞান ভবনে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল সাড়ে ন’টায়। কিন্তু অমিত সভাগৃহে যান প্রায় ৯.৪৩ মিনিটে। অন্য অভ্যাগতদের সঙ্গে সামান্য সৌজন্য বিনিময়, বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরনের সঙ্গে মামুলি কথা ছাড়া অধিকাংশ সময়েই চুপচাপ বসে থাকতে দেখা যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। স্রেফ লিখিত ভাষণ পাঠ করেই বসে পড়েন তিনি। মাদক দমন শাখার পক্ষ থেকে উপস্থিত অভ্যাগতদের ধন্যবাদ দেওয়া শেষ হতেই আসন ছেড়ে উঠে পড়েন অমিত। পিছনে পিছনে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভল্লা, মাদক দমন শাখার ডিজি রাকেশ আস্থানারা।
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কথা ছিল জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন দেখে সঞ্চালিকা মনীষা (আকাশবাণীর এফ এম স্টেশনের সঞ্চালিকা হিসেবে জনপ্রিয়) মাইক্রোফোনে তাঁকে জাতীয় সঙ্গীতের জন্য অপেক্ষা করার অনুরোধ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ ভাবে অনুরোধ করা ‘যথেষ্ট সাহসের কাজ’ বলেই মনে করছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত আমলাদের একাংশ। আবার অনেকের মতে, মনীষা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দাঁড়িয়ে যেতে বলে সমালোচনার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। কারণ, অমিত চলে যাওয়ার পরে যদি জাতীয় সঙ্গীত হত, দেশপ্রেমের প্রশ্নে তাঁকে আক্রমণ করার সুযোগ পেতেন বিরোধীরা।
আরও পড়ুন: ‘ক্ষতি হয়তো কুকথাতেও’, দিল্লি হারের ব্যাখ্যায় অমিত
মঞ্চ ছেড়ে বেরোনোর সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আগে আগে যাচ্ছিলেন সরকারি আলোকচিত্রী। মনীষার কথা শুনে তিনিই দাঁড়িয়ে পড়েন। ঘুরে দ্রুত ইশারায় বোঝানোর চেষ্টা করেন বিষয়টি। ততক্ষণে অনুরোধ শুনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন অমিত শাহও। ফিরে আসেন নিজের আসনে। সঙ্গে অন্য অভ্যাগতেরাও। শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত। সমাপনে সকলকে নমস্কার জানিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যান অমিত। এ বার আর কেউ ডাকেননি।