বিজু পট্টনায়ক। ছবি: সংগৃহীত।
ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজু পট্টনায়কের বিখ্যাত ডাকোটা এয়ারক্রাফট এ বার কলকাতা থেকে পাড়ি দেবে ওড়িশায়, এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া তথা এএআইয়ের সঙ্গে এই ব্যবস্থাই করেছে সে রাজ্যের সরকার। পাশাপাশি, এয়ারক্রাফট তথা বিমানটি রাখার জন্য ভুবনেশ্বরে বিজু পট্টনায়ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে ১.১ একর পরিমাণ জমির ব্যবস্থা করা হয়েছে এএআইয়ের তরফে। বর্তমানে বিমানটি কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাখা আছে।
ওড়িশার স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রে খবর, ২০২০ সাল থেকেই ডাকোটা বিমানটি কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বরে নিয়ে আসার কথাবার্তা শুরু হয়েছিল, করা হচ্ছিল জরুরি পদক্ষেপও। অতিমারি সংক্রমণ শুরু হওয়ার ফলে সেই প্রক্রিয়ার কাজ অনেকাংশেই ঢিমে হয়ে যায়। এর পরে, দেশে সংক্রমণ যখন ঊর্ধ্বগামী, তখন একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিমানটিকে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া। এখন ফের কথাবার্তা শুরু করেছে এএআই ও ওড়িশা প্রশাসন। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বোর্ড মিটিঙে এএআই ওড়িশা সরকারের সমস্ত প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। এই প্রস্তাবগুলির মধ্যে রয়েছে ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরের কাছে ১.১ একর জমির আবেদনও। যেখানে ডাকোটা উড়ানটি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কীর্তির স্মারক হিসাবে রাখা থাকবে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ৬৪ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা, এবং ডানাসমেত ৯৫ ফুট চওড়া এই বিমানটিকে টুকরো টুকরো করে গাড়ির মাধ্যমে সড়কপথে ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে। তার পরে, অভিজ্ঞ প্রযুক্তিবিদ ও কারিগরদের সাহায্যে সেটিকে ফের তৈরি করা হবে। পাশাপাশি, প্রয়োজনীয় মেরামতিও হবে বিমানটির।
সমাজসংস্কারক ও রাজনীতিবিদ হওয়ার পাশাপাশি বিজু পট্টনায়ক ছিলেন এক জন দক্ষ বিমানচালক। সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে কলিঙ্গ এয়ারলাইনস নামের একটি বিমানসংস্থা চালু করেছিলেন বিজু। কলকাতা থেকে নিয়ন্ত্রিত হত সেটি। সংস্থাতে ছিল অন্তত ১৮টি ভিটি-এভিআই ডাকোটা বিমান। ঐতিহাসিক অনিল ধিরের মতে, পট্টনায়ক সবচেয়ে পছন্দের বিমান ছিল এগুলি। পরবর্তীতে ১৮টি বিমানের মধ্যে ১২টি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। টিকে থাকা ছ’টির মধ্যে একটি রয়েছে কলকাতা বিমান বন্দরে।
ঐতিহাসিক ধির আরও জানিয়েছেন, এই বিমানটির সাহায্যেই ১৯৪৭ সালের ২৪ জুলাই ইন্দোনেশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী সুলতান জাহিরির ও সে দেশের উপরাষ্ট্রপতিকে উদ্ধার করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। জওহরলাল নেহরুর নির্দেশেই এই অভিযানে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় ইন্দোনেশিয়ায় চলছিল বিক্ষোভ। এই কারণে পরবর্তীতে দু’বার বিজু পট্টনায়ককে ‘ভূমিপুত্র’ উপাধি দেয় দেশটি, যা তাদের সর্বোচ্চ অসামরিক তকমা। এ ছাড়া, ব্রিটিশ শাসনকালে রয়্যাল ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সেরও সদস্য ছিলেন পট্টনায়ক। ভুবনেশ্বর তথা বিজু পট্টনায়ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডিরেক্টর প্রসন্ন প্রধান জানিয়েছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বিমানের প্রতি ভালবাসা ও দক্ষ বিমানচালক হওয়ার স্মরণেই প্রদর্শন করা হবে ডাকোটা বিমানটি।