নিজের বাড়িতেই খুন হলেন হিমাংশু যাদব। ছবি: সংগৃহীত।
তাঁর ‘অপরাধ’ প্রেম করে দূরসম্পর্কের ভাইঝিকে বিয়ে করা। শাস্তি হিসেবে ‘অপরাধী’ যুবককে গুলি করে মারার নিদান দিল গ্রাম পঞ্চায়েত। সালিশি সভার নির্দেশেই পিটিয়ে মারা হল তাঁকে। তাতেও ক্ষান্ত না হয়ে সেই যুবকের মৃতদেহে ছ’টি গুলি দেগে দিল দুষ্কৃতীরা। জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওই যুবকের স্ত্রীকেও। পরিবারের সম্মান রক্ষায় এ ধরনের খুনের ঘটনা এ দেশে নতুন নয়। তাতে জুড়ল সোমবারের এই ঘটনাও। ওই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি ১৯ জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
বিহারের রাজধানী পটনা থেকে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার দূরে ভাগলপুরের গৌরচাক্কি গ্রাম। সেখানে একই পাড়ায় থাকতেন হিমাংশু যাদব ও সোনি কুমারী। সম্পর্কে হিমাংশুর ভাইঝি হন সোনি। ছোটবেলা থেকেই একসঙ্গে বেড়ে ওঠা-পড়াশোনা। সোনির গৃহশিক্ষকও ছিলেন হিমাংশু। ধীরে ধীরে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভাগলপুরের সিনিয়র পুলিশ সুপার (এসএসপি) মনোজ কুমার জানিয়েছেন, মাস আটেক আগে পরিবারের অমতে দু’জনেই পালিয়ে গিয়ে স্থানীয় একটি মন্দিরে বিয়ে করেন। এর পর গত ২০ মে সোনিকে নিয়ে নিজের বাড়ি ফিরে আসেন হিমাংশু। সেখানেই বসবাস করতেন তাঁরা। তাঁর মেয়েকে অপহরণ করে হিমাংশু বিয়ে করেছে বলে মামলা রুজু করেন সোনির বাবা পরমানন্দ যাদব। সোনি যে নাবালিকা সে দাবিও করেন তাঁর বাবা। তবে আদালতে দাঁড়িয়ে বাবার দাবি খণ্ডন করে সোনি জানান, তিনি নাবালিকা নন এবং নিজের ইচ্ছাতেই হিমাংশুকে বিয়ে করেছেন। আদালতে জামিন পেয়ে যান হিমাংশু। এর পর এই বিষয়টির মীমাংসা চেয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হন পরমানন্দ। সেখানেই দুই পরিবারের উপস্থিতিতে সোমবার সালিশি সভা বসে। সালিশি সভায় ডেকে পাঠানো হয় হিমাংশু ও সোনিকেও। ভাইঝি সোনিকে বিয়ে করে দীর্ঘ দিনের সামাজিক প্রথা ভেঙেছেন বলে হিমাংশুকে বকাঝকাও করেন পঞ্চায়েত সদস্যরা। এর পর সে রাতেই ফের সালিশি সভায় হিমাংশুর বাবাকে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু, তিনি সেখানে যাননি বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাতেই রেগে যান সোনির আত্মীয়েরা। হিমাংশুর পরিবারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে পঞ্চায়েতকে অনুরোধ করেন তাঁরা। পুলিশের দাবি, সেই সভাতেই এক পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, “হিমাংশুকে মেরে না ফেলা পর্যন্ত এই সভা চলতেই থাকবে।” এর এক ঘণ্টা পরে খুন হয়ে যান হিমাংশু।
আরও পড়ুন
‘শুধু কালো ধোঁয়া, আওয়াজ, আতঙ্ক, পাহাড় থেকে নামব কী করে!’
পুলিশ জানিয়েছে, সে রাতেই গৌরচাক্কি গ্রামে বছর ছাব্বিশের হিমাংশুর বাড়িতে চড়াও হয় জনা পঁচিশ দুষ্কৃতী। বাড়ির দরজা ভেঙে তাঁকে টেনে বাইরে এনে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। হিমাংশু ছাড়াও ওই হামলার শিকার হন তাঁর স্ত্রী সোনি ও মা জলযশ দেবী। প্রচণ্ড মারধরের পর সেখানেই পড়ে যান হিমাংশু। নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। এর পর তাঁকে পর পর ছ’টি গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন হিমাংশুর মা-ও। সেখান থেকেই সোনিকে জোর করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। হিমাংশুর দাদা অবিনাশ যাদব বলেন, “মিনিট পনেরো সে ভাবেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল হিমাংশু। কেউ তাকে হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়ার জন্য এগিয়ে আসেননি।” এলাকার কাজরাইলি থানায় এই ঘটনার খবর দেওয়া হয়। পুলিশকর্মীরাই হিমাংশুকে ভাগলপুর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
আরও পড়ুন
ক্যালিফোর্নিয়ায় ভারতীয় ছাত্রকে গুলি, অবস্থা আশঙ্কাজনক
এসএসপি মনোজ কুমার জানিয়েছেন, হিমাংশুর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকাশ যাদব ও রাজা যাদব নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আরও ১৯ জনের খোঁজ করছে পুলিশ। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার পর নিখোঁজ সোনিরও খোঁজ করা হচ্ছে। বেপাত্তা হয়েছেন সোনির পরিবারের পুরুষ সদস্যরাও। এই ঘটনার পরই গোটা এলাকা থমথমে। রয়েছে চাপা উত্তেজনাও। এলাকায় টহল দিচ্ছেন সশস্ত্র পুলিশকর্মীরা।