হেলমেট বিলি করছেন রাঘবেন্দ্র।
রাস্তায় কোনও বাইক আরোহীর মাথা খালি দেখলেই পরিয়ে দিচ্ছেন হেলমেট। বিহারের কৈমুর জেলার রাঘবেন্দ্র গত কয়েক বছর ধরে এ কাজটাই করে চলেছেন। শুধু তাই নয়, নিজের ঘরবাড়ি, জমি জায়গা, গয়না বন্ধক রেখে গত ছ’বছর ধরে রাজ্যে-রাজ্যে পথে পথে ঘুরে এই কাজটাই নির্বিকারে করে চলেছেন রাঘবেন্দ্র।
ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার বাইক আরোহীর মাথা সুরক্ষিত হয়েছে তাঁর দেওয়া হেলমেটেই। শুধু বিহার নয়, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং রাজস্থানে গিয়েও হেলমেট বিলি করেছেন রাঘবেন্দ্র। এবং সবক’টিই বিনামূল্যে। হাজার হাজার হেলমেট বিতরণ করে এখন তিনি সকলের কাছে ‘হেলমেট ম্যান’ নামেই পরিচিত।
হেলমেটের জন্য টাকা না নিলেও রাঘবেন্দ্র কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে বদলে এমন একটি জিনিসের অনুরোধ করছেন, যা আরও জীবনকে গড়ে তোলার কাজে ব্যবহার করা যায়। হেলমেট ছাড়া বাইক চালকদের হেলমেট দেওয়ার পরই তাঁদের কাছ থেকে ষষ্ঠ থেকে স্নাতক স্তরের বই চাইছেন রাঘবেন্দ্র। এর পিছনেও কারণ আছে। রাঘবেন্দ্র জানান, এই বই গরিব পড়ুয়াদের মধ্যে বিলি করে দেন তিনি। এর মধ্যেই কয়েক লক্ষ বই বিলি করেছেন।
হঠাৎ হেলমেট বিলি করা কেন, তা ও আবার বিনামূল্যে? এই পিছনেও একটি ঘটনা রয়েছে। রাঘবেন্দ্র জানান, ২০১০-এ তাঁর কলেজের এক বন্ধু বাইক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। ওই বন্ধু হেলমেট ছাড়াই বাইক চালাতেন। হেলমেট না থাকার কারণেই মাথায় আঘাত লেগে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। সেই ঘটনাই রাঘবেন্দ্রর দৃষ্টিভঙ্গি এক লহমায় বদলে দিয়েছিল। তার পরই তিনি হেলেমেট নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার শুরু করেন। কয়েক বছর পর টাকা-পয়সা জোগাড় করে হেলমেট কেনেন। হেলমেট বিহীন বাইক আরোহী দেখলেই তাঁদের মাথায় হেলমেট পরিয়ে দিতেন। ক্রমে হেলমেট বিতরণের সংখ্যাটা বাড়তে থাকে। একটা সময় এমন আসে যে, হেলমেট কেনার জন্য রাঘবেন্দ্রকে নিজের বাড়ি, গয়না, জমি পর্যন্ত বন্ধক রাখতে হয়। তার এই কাজের প্রশংসা করেছেন খোদ কেন্দ্রীয় পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী।