অগ্নিকাণ্ডের পর কুয়েতের সেই বহুতল আবাসন। ছবি: সংগৃহীত।
জুলাই মাসেই বিয়ে। গ্রামের বাড়িতে তাই সাজ সাজ রব। আগামী মাসেই কুয়েত থেকে দেশে ফেরার কথা ছিল ছেলের। কিন্তু কুয়েতে বহুতলের অগ্নিকাণ্ডের পর সব হিসাব ওলটপালট হয়ে গিয়েছে বিহারের মদিনা খাতুনের। বার বার ছেলেকে ফোন করছেন, কিন্তু কোনও উত্তর মিলছে না। আদৌ তাঁর ছেলে বেঁচে আছেন কি না, জানেন না তিনি!
বুধবার ভোরে কুয়েতের রাজধানীর দক্ষিণে মাঙ্গাফ এলাকার একটি বহুতল আবাসনে আগুন লাগে। জানা যায়, ওই আবাসনে মূলত থাকেন শ্রমিকেরা, যাঁদের অধিকাংশই ভারতীয়। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪৯। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় প্রায় ৫০ জনকে। কুয়েত প্রশাসন জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে প্রায় ৪৫ জন ভারতীয়। কুয়েতের অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের অধিকাংশেরই দেহ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে, দেহ দেখে তাঁদের শনাক্ত করাই কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছে। দেহ শণাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করানো হচ্ছে।
মদিনা জানান, তাঁর বড় ছেলে কালু খান কর্মসূত্রে বেশ কয়েক বছর ধরে কুয়েতে বাস করছেন। বিহারের দারভাঙ্গা জেলার নয়না ঘাট এলাকার বাসিন্দা কালুর বিয়ে জুলাই মাসের প্রথম দিকে। ৫ জুলাই দেশে ফেরার কথা তাঁর। যে বিল্ডিংয়ে আগুন লেগেছে, সেখানেই থাকতেন কালু। ঘটনার পর থেকেই ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না মদিনা। অসহায় অবস্থায় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।
মদিনার কথায়, ‘‘মঙ্গলবার রাত ১১টার সময় শেষ বার ছেলের সঙ্গে আমার কথা হয়। সে আমাকে বলেছিল সব ঠিকঠাক আছে। সামনের মাসেই দেশে ফিরবে। আগুন লাগার কথা জানার পর থেকেই কালুর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু ফোনে পাচ্ছি না। আমরা জানি না আমাদের ছেলে কোথায় আছে। এই বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু এখনও কোনও খবর পায়নি। দূতাবাসের কর্তাদের কাছে ছেলের ছবি পাঠিয়েছি। ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি, যাতে ছেলের সম্পর্ক কোনও ভাল খবর পাই।’’
উল্লেখ্য, নিহত শ্রমিকদের মধ্যে বেশ কয়েক জন রয়েছেন, যাঁরা মিশর, নেপাল, পাকিস্তান এবং ফিলিপিন্সের বাসিন্দা। আবার ভারতীয়দের মধ্যে অধিকাংশই কেরল, তামিলনাড়ু এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু রাজ্যের বাসিন্দা। প্রত্যেকেরই বয়স ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। কুয়েত প্রশাসন জানিয়েছে, তারা হতাহতদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে। কুয়েতের এই ঘটনার পর বুধবার একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে স্থির হয়, নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। শুক্রবার বায়ুসেনার একটি বিমানে কুয়েত থেকে ৪৫ জন ভারতীয়ের দেহ ফিরিয়ে নিয়ে আনা হয়েছে কেরলে।