ফাইল চিত্র।
বিহার বিধানসভার ভোট-ময়দানেও তরজার কেন্দ্রে সেনা, সীমান্ত, চিনা আগ্রাসন, এমনকি জম্মু-কাশ্মীরে রদ হওয়া অনুচ্ছেদ ৩৭০-ও! প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম দফায় সংসদে দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদীর দাবি ছিল, উন্নয়নের দৌড়ে এগোতে সমস্ত রাজ্যের মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা আর জাতপাতের পরিবর্তে উন্নতির নিরিখে ভোটই নাকি ‘গুজরাত মডেলের’ সব থেকে বড় সাফল্য। কিন্তু শুক্রবার বিহারে ভোট-প্রচারে এসে গত ছ’বছরের মতো সেই জাতীয়তাবাদেরই জিগির তোলার চেষ্টা করে গেলেন তিনি। সেই সঙ্গে নাগাড়ে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করলেন বিহারি অস্মিতাকে। স্থানীয় ভোজপুরি ভাষায় বললেন, ‘‘গালওয়ানে বিহার রেজিমেন্টের সেনা শহিদ হয়েছেন। শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন পুলওয়ামায়। কিন্তু ভারতমাতার মাথা নীচু হতে দেননি।’’
এর আগেও চিনা আগ্রাসনের মোকাবিলায় বিহার রেজিমেন্টের কথা আলাদা ভাবে উল্লেখ করেছিলেন মোদী। প্রশ্ন উঠেছিল, ভোটের স্বার্থে সেনার মধ্যেও প্রাদেশিকতা টেনে আনা কি আদৌ যুক্তিসঙ্গত? আর এ দিন এ প্রসঙ্গে চাছাছোলা আক্রমণের পথে হেঁটেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী দেশের বীর সৈনিকদের সামনে শ্রদ্ধায় মাথা নোয়ানোর কথা বলেছেন। কিন্তু চিনা সৈন্য যে সীমান্তের এ পারে ১,২০০ কিলোমিটার ঢুকে বসে রয়েছে, এমনকি তারা যে লাদাখ সীমান্ত টপকে ভারতের মধ্যে ঢুকেছে, তা স্বীকার করতেও তিনি নারাজ। এই মিথ্যাচার আসলে দেশের বীর সেনাদের প্রতি ঘোর অপমান।
বিরোধী জোটকে ‘দেশদ্রোহিতার কাঠগড়ায়’ দাঁড় করাতে প্রধানমন্ত্রী এ দিন বলেছেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে। কিন্তু এখন বিরোধী শিবিরের অনেকে তা ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন। একই সঙ্গে জাতীয়তাবাদ আর বিহারি অস্মিতাকে উস্কে দিয়ে মোদী ভিড়ের দিকে প্রশ্ন ছুড়েছেন, যে বিহার ঘরের ছেলে-মেয়েকে সীমান্ত রক্ষায় পাঠায়, ৩৭০ অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব তাঁদের অপমান নয়? ‘দেশপ্রেমের প্রতিযোগিতায়’ মোদীকে চাপে ফেলতে রাহুলের পাল্টা চ্যালেঞ্জ, “আগে জবাব দিন যে, কবেকার মধ্যে চিনা সেনাকে সীমান্তের ও পারে ফেরত পাঠাতে পারবেন আপনি?”
আরও পড়ুন: সংসদীয় কমিটিতে ফেসবুকের হাজিরা
আরও পড়ুন: জঙ্গলরাজ বনাম পরিযায়ী শ্রমিক
‘দেশপ্রেমের মোড়কে’ বিভিন্ন নির্বাচনে বিপুল ফয়দা তুলেছেন মোদী। এ দিন স্পষ্ট যে, বিহারেও সেই চেনা মাঠে বিরোধী শিবিরকে গোল দিতে চান তিনি। পাল্টা হিসেবে চিনা আগ্রাসনের সামনে প্রধানমন্ত্রীর ৫৬ ইঞ্চির ছাতি চুপসে যাওয়ার কথা বলে বিরোধীরা সেই খেলা চৌপাট করে দিতে পারবেন কি না, সেটাই দেখার।