ছবি: পিটিআই।
ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেনি কংগ্রেস। মুখে ‘গরিবি হটাও’ স্লোগান তুলেও, আকণ্ঠ দুর্নীতিতে মজে পয়সা লুট করেছে দরিদ্রদের। জনতার দরবারে তার শাস্তি হিসেবেই এই প্রথম লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে তাদের সাংসদ সংখ্যা একশোর নীচে নেমে গিয়েছে বলে মঙ্গলবার কটাক্ষ করলেন নরেন্দ্র মোদী। যার পাল্টা কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর দাবি, ক্ষমতার লোভে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া তাঁদের ধাতে নেই। সেই কাজে মোদী বরং অনেক বেশি দক্ষ। বছরে ২ কোটি চাকরির গাজর ঝোলানো থেকে শুরু করে বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে তা প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে পাঠানোর স্বপ্ন দেখানো পর্যন্ত যার উদাহরণ অজস্র। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের প্রশ্ন, বিহারের মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কতখানি পূরণ করা হয়েছে, আগে তার হিসেব দিন প্রধানমন্ত্রী।
রাজ্যসভায় সোমবার বিজেপির সাংসদ সংখ্যা আরও ন’জন বেড়ে যাওয়ায় এই প্রথম সেখানে ১০০ ছাড়াল এনডিএ-র শক্তি (এখন ১০৪)। উল্টো দিকে, ২৪২ সদস্যের ওই কক্ষে কংগ্রেসের সাংসদ সংখ্যা নেমে গিয়েছে ৩৮-এ। শুধু তা-ই নয়, লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে এই প্রথম শতাব্দীপ্রাচীন দলটির সাংসদ সংখ্যা একশোর নীচে নেমে গেল। মঙ্গলবার বিহারে ভোট-প্রচারে গিয়ে এই প্রসঙ্গই টেনে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, “(অনেকে মনে করেন) জনতার পয়সা যত খুশি লুট করো। কিন্তু সাধারণ মানুষকে দীর্ঘ দিন বোকা বানিয়ে রাখা শক্ত। আজ দেখুন, তাঁরা কংগ্রেসের কী অবস্থা করেছেন। লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে তাদের সাংসদ সংখ্যা এখন একশোর কম।…রাজস্থান, গুজরাতের মতো বহু রাজ্য থেকে সংসদের দুই কক্ষে কোনও প্রতিনিধিই নেই। বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে তাদের (বিভিন্ন আসনে) তিন-চার-পাঁচ নম্বর দল হিসেবে লড়তে হচ্ছে অন্য কারও (দলের) কুর্তার কোনা ধরে।”
মোদীর মতে, দুর্নীতির পাশাপাশি কংগ্রেসের এই দুরবস্থার জন্য দায়ী দশকের পর দশক তাদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি। তাঁর কথায়, “গরিবি হটাও স্লোগানের মালা জপেও পকেট ভরেছে শুধু পরিবারের। চাষিদের ঋণ মাফ করার কথা দিয়েও তা রাখা হয়নি। সেনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েও কার্যকর করা হয়নি ‘এক পদ-এক পেনশন’ প্রকল্প।…ব্যালট বাক্সে এর জবাব দিয়েছে জনতা।…এখনও রাগ এতটাই যে, ভোট-ময়দানে সুযোগ পেলেই কংগ্রেসকে শাস্তি দিচ্ছেন আমজনতা।”
বিরোধী শিবিরের পাল্টা অভিযোগ, সরকারে থেকেও নিজেদের কাজের খতিয়ান না-দিয়ে উল্টে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেওয়ার এই কৌশল মোদীর সহজাত। তাদের প্রশ্ন, কেন্দ্রে মোদী আর বিহারে নীতীশ কুমারের ‘ডবল ইঞ্জিনের’ সরকার এত ভাল কাজ করে থাকলে, কেন তার জোরে ভোট বৈতরণী পেরনোর ভরসা পাচ্ছে না এনডিএ? কেন বিহারের ভোটে প্রচারের মুখ হতে হচ্ছে মোদীকে? পেশ করতে হচ্ছে কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের রিপোর্ট কার্ড? শুধু তাতে চিঁড়ে না ভেজার আশঙ্কায় ‘জাতীয়তাবাদ ও মেরুকরণের’ মিশেল হিসেবে বার বার সেনা-সীমান্ত-কাশ্মীর-৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ-রামমন্দির-পাকিস্তানের প্রসঙ্গ টেনে আনতে হচ্ছে কেন?
রাহুলের দাবি, “আমরা ক্ষমতা দখলের জন্য কখনও মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিইনি, দেবও না। মোদীজিই বরং লোকসভা ভোটের আগে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে এনে সকলের অ্যাকাউন্টে দেওয়ার। কিন্তু পরে নোটবন্দি করে সাধারণ মানুষের টাকায় শিল্পপতিদের ঋণ মকুব করেছেন তিনি। শুরুতে ফি বছর ২ কোটি নতুন চাকরির সুযোগ তৈরির কথা বলতেন। এখন আর বলেনও না।” আর দুর্নীতি প্রসঙ্গে তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “বিহারের নতুন প্রজন্মের প্রত্যেকে জানেন, কী ভাবে এ রাজ্যকে লুট করেছেন মোদী-নীতীশ জুটি।”
তেজস্বীর দাবি, “অন্যের প্রতিশ্রুতি পূরণের কথা না-আউড়ে আগে নিজের কথা রাখার উদাহরণ তুলে ধরুন মোদী। জবাব দিন, কোথায় বিহারের জন্য ২০১৫ সালে ঘোষিত ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ? দ্রুত আর্থিক উন্নতির লক্ষ্যে বিহারকে বিশেষ (স্পেশ্যাল) রাজ্যের তকমা দেওয়ার উদ্যোগই বা কোথায়?” এ প্রশ্নের উত্তরে না-গিয়ে অবশ্য লালু প্রসাদ যাদব ও রাবড়ি দেবীর জমানাকেই দিনভর নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।