—ফাইল চিত্র।
রাতারাতি তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। বিজেপির হাত ধরে নতুন করে সরকার গড়েছিলেন বিহারে। সময় এলে মানুষ এই বিশ্বাসঘাতকতার জবাব দেবেন বলে সেই সময় মন্তব্য করেছিলেন লালুপ্রসাদ যাদব। কিন্তু বিজেপি ও নীতীশের জোটকে টক্কর দিতে এ বার ভোটের ময়দানে গরহাজির তিনি নিজেই। গত চার দশকে এই প্রথম বার বিধানসভা নির্বাচনে দলের হয়ে প্রচার করতে দেখা যাবে না তাঁকে।
পশুখাদ্য দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত লালুপ্রসাদ যাদবের চার বছরের জেল হয়েছে। ২০১৮-র জানুয়ারি থেকে ঝাড়খণ্ডে জেল খাটছেন ৭২ বছরের এই রাজনীতিক। শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে বিগত আড়াই বছরে বেশিরভাগ সময়টা যদিও হাসপাতালেই কাটিয়েছেন তিনি। তবে মোট সাজার অর্ধেক কাটিয়ে ফেলার পর সম্প্রতি একের পর এক মামলায় জামিন পেতে শুরু করেছেন তিনি। শুক্রবার চাইবাসা ট্রেজারি মামলায় তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট।
তবে আপাতত জেলেই থাকতে হবে লালুপ্রসাদ যাদবকে। পশুখাদ্য দুর্নীতির সবক’টি মামলায় জামিনের আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। আগামী ৯ নভেম্বর, বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরনোর ঠিক এক দিন আগে, শেষ মালাটির শুনানি রয়েছে। তাতে যদি জামিন পেয়েও যান, তত দিনে আর কিছুই করার থাকবে না। তাই তাঁকে ছাড়াই নির্বাচনে লড়তে হবে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-কে।
আরও পড়ুন: ক্ষুধাকে অস্ত্র করার বিরুদ্ধে লড়াই, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির
জেলে যাওয়ার আগে ছেলে তেজস্বীর হাতে দলের দায়িত্ব তুলে দেন লালুপ্রসাদ যাদব। তার পরেও, নির্বাচনী প্রস্তুতি তদারকি করে গিয়েছেন তিনি। সেইসময় বিরোধীরা অভিযোগ করেন, অসুস্থতার দোহাই দিয়ে যে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন আরজেডি সুপ্রিমো, সেটিকে তিনি দলীয় কার্যালয় করে তুলেছেন। সেখান থেকেই দলের কাজকর্ম পরিচালনা করছেন। ভোটের টিকিট পেতে হাসপাতালের বাইরে আরজেডি নেতাদের ভিড়ের ছবিও সংবাদমাধ্যমের দৌলতে সামনে এসেছে।
কিন্তু দলের নির্বাচনী প্রচারে কোথাও সশরীরে যোগ দিতে পারেননি লালুপ্রসাদ যাদব। এ বছর দলের পোস্টারেও তাঁর ছবি দেখা যায়নি। বরং তেজস্বীর ছবি দিয়ে ‘নয়া সোচ, নয়ি বিহার’-এর স্বপ্ন ফেরি করতে দেখা গিয়েছে আরজেডি নেতাদের। কিন্তু অনভিজ্ঞ তেজস্বী এই গুরুদায়িত্ব কতটা সামলাতে পারবেন, বিজেপি-নীতীশের জোটের সামনে আদৌ টিকে থাকতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দলের অন্দরেই ধন্দ রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত।
আরও পড়ুন: ভীমা-কোরেগাঁও হিংসায় গ্রেফতার ৮৩ বছরের মিশনারি স্টান স্বামী
১৯৭৭ সালে প্রথম বার সাংসদ নির্বাচিত হন লালুপ্রসাদ যাদব। সেই থেকে শুধুমাত্র বিহারই নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও অভিজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবে সমাদৃত তিনি। বিহারের রাজনীতিতে তাঁর এই অনুপস্থিতি নজর কেড়েছে অনেকেরই। এর আগে, লোকসভা নির্বাচনের সময়ও জেলে ছিলেন লালুপ্রসাদ যাদব। একই সঙ্গে, একাধিক বার্ধক্যজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে তাঁর। ভবিষ্যতেও দলের নির্বাচনী প্রচারে আগের মতো সক্রিয়তা দেখাতে পারবেন কিনা, তা নিয়েও সন্দিহান রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।