Bihar Election

বিজেপি-জেডিইউ আসন রফা, চিরাগ এখনও একা

এনডিএ থেকে যে ভাবে চিরাগ শরিক দলের প্রার্থী দিচ্ছেন তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনীতির অনেকে। কারও মতে, তিনি বাবার মতো আসন্ন বিধানসভা ফলাফলের পরে ‘কিংমেকারের’ ভূমিতা নিতে চাইছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০ ০৪:০৭
Share:

—ফাইল চিত্র।

বিহারে আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে জেডিইউ-বিজেপি একমত হলেও, এখনও একলা লড়ার পক্ষে রামবিলাস পাসোয়ানের দল এলজেপি। জোট নিয়ে জটিলতার মধ্যেই আগামিকাল পটনায় জেডিইউ-বিজেপির আসন ভাগাভাগি আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। এলজেপি নেতৃত্বকে বোঝানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে বিজেপি দাবি করলেও, এলজেপি সভাপতি তথা রামবিলাস-পুত্র চিরাগ জানিয়েছেন, আজ রাত পর্যন্ত বিজেপির সঙ্গে আসন নিয়ে নতুন করে কোনও আলোচনা হয়নি।

Advertisement

আজ যে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হয়েছে, তাতে বিহারের ২৪৩ আসনের বিধানসভায় নিজেদের প্রাপ্ত ১২২টি আসনের মধ্যেই দলিত নেতা জিতনরাম মাঁঝীর দলকে পাঁচটি আসন ছাড়তে চলেছেন নীতীশ কুমার। অন্য দিকে, গত শনিবার আরজেডি-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা করে শেষ মুহূর্তে এনডিএ বিরোধী জোট থেকে বেরিয়ে এসেছিল বিকাশশীল ইনসান পার্টি (ভিআইপি)। দাবি মতো আসন না পাওয়ায় জোট থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সে সময়ে জানিয়েছিলেন ওই দলের নেতা মুকেশ সাহনি। এর পরেই বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করেন সাহনি। সূত্রের মতে, বিজেপির ভাগে যে ১২১টি আসন রয়েছে তার থেকেই পাঁচ থেকে সাতটি আসন সাহনির দলকে দেওয়া হবে। আজ বিজেপি প্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করতে দিল্লিতে বৈঠক করেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। সূত্রের মতে, আগামিকাল রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলা হবে।

এরই মধ্যে, আজ নীতীশের শাসনের তীব্র সমালোচনা করেন চিরাগ। তিনি বলেন, ‘‘নীতীশের এত বছরের শাসনের ফলে মানুষ যতটা ক্ষুব্ধ, তা লালুপ্রসাদের ১৫ বছরের শাসনের শেষে দেখা যায়নি। সেই কারণে বিহারে জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসার প্রশ্নে কোনও আফসোস নেই।’’ চিরাগের অভিযোগ, নীতীশের লক্ষ্য হল উন্নয়ন করার চেয়েও যে কোনও ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা। তা করতে গিয়ে প্রয়োজনে বিরোধী শিবিরের হাত ধরতেও যে নীতীশ পিছপা হননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ক্ষমতায় থাকতে এক বার লালুপ্রসাদ, তার পরে আবার বিজেপির হাত ধরেন নীতীশ।

Advertisement

আর একলা লড়ার যুক্তিতে চিরাগ বলেন, ‘‘নীতীশ কুমারের উপর ভরসা করেছিলাম। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না বিহারের মানুষ। তাই ওই সিদ্ধান্ত।’’ গোড়া থেকেই চিরাগ বলে আসছেন, তাঁর আসল লড়াই নীতীশের বিরুদ্ধে। তাই তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় না করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চিরাগের মতে, এই মুহূর্তে বিহারের প্রয়োজন বিজেপি-শাসিত সরকারের। তবে বিহারে উন্নয়ন হবে। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নমুখী ভাবমূর্তির প্রশংসা করে ওই এলজেপি নেতা বলেন, ‘‘আমাদের দলের ‘বিহার প্রথম, বিহারি প্রথম’ নীতি প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা অনুপ্রাণিত। তা বলে বিজেপির সঙ্গে আসন রফা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।’’

এনডিএ থেকে যে ভাবে চিরাগ শরিক দলের প্রার্থী দিচ্ছেন তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনীতির অনেকে। কারও মতে, তিনি বাবার মতো আসন্ন বিধানসভা ফলাফলের পরে ‘কিংমেকারের’ ভূমিতা নিতে চাইছেন। যে ভাবে রামবিলাস ২০০৫ সালে বিহারে সরকার গড়ার প্রশ্নে নির্ণায়ক শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। যদিও কয়েক মাস পরেই সেই সরকার পড়ে যায়। কিন্তু এর জন্য চিরাগের দলকে যথেষ্ট সংখ্যক আসন পেতে হবে। যা পাওয়া নিয়ে রীতিমতো সংশয় রয়েছে।

অন্য দিকে, গোটা জটের পিছনে বিজেপির হাত দেখছেন জেডিইউ শিবিরের একাংশ। তাঁদের মতে, নীতীশ কুমারকে দুর্বল করতেই চিরাগকে দিয়ে প্রার্থী খাড়া করানোর কৌশল নিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। কারণ, অনেক জেতা আসনের হিসাব জটিল করে তুলতে পারে বিহারে বিক্ষিপ্ত ভাবে থাকা পাসোয়ান ভোট। এ যাত্রায় বিহারে এবার প্রায় সমসংখ্যক আসনে লড়ছে জেডিইউ-বিজেপি। নীতীশ কুমারকেই বড় শরিক মেনে নিয়ে বিজেপি নির্বাচন লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজেপি যদি বেশি আসন পেয়ে যায় সে ক্ষেত্রে দুর্বল ভাবে নিজের ইনিংস শুরু করবেন নীতীশ কুমার। জেডিইউয়ের আশঙ্কা, সেই পরিস্থিতিতে প্রতি পদে নীতীশের দুর্বলতার ফয়দা তুলবে বিজেপি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement