গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
করোনা সংক্রমণের মধ্যেই শুক্রবার বিহারে বিধানসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে নির্বাচনী আচরণবিধি জারি হয়ে গেল রাজ্যে। ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় তিন দফায় ভোট হবে— ২৮ অক্টোবর, ৩ এবং ৭ নভেম্বর। ফলপ্রকাশ ১০ নভেম্বর। কমিশনের ওই ঘোষণা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দশেরা থেকে দেওয়ালির মধ্যে বিহারের রাজনীতির ভাগ্য নির্ধারিত হতে চলেছে।’’
বিহারে ভোটার প্রায় সাত কোটি। এত মানুষ ভোট দিতে এলে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা যে রয়েই যায়, তা মেনে নিয়েছেন কমিশনের কর্তারা। তাই বিহারে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বহু নতুন পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল আরোরা। যাঁরা সংক্রমিত বা সংক্রমিত সন্দেহে নিভৃতবাসে রয়েছেন, তাঁরা পোস্টাল ব্যালটে বা শেষ ঘণ্টায় বুথে এসে ভোট দিতে পারবেন। তাঁদের কথা ভেবে ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়িয়েছে কমিশন।
ভোটের প্রচারে দূরত্ব-বিধি মেনে চলতে সব দলের জন্য বেশ কিছু নিয়ম এ বার বলবৎ করছে কমিশন। ভার্চুয়াল প্রচারে জোর দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জনসভা যদি করতেই হয়, সেখানে নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকের বেশি জমায়েত করা যাবে না। দূরত্ব-বিধিও মানতে হবে সেখানে।
প্রশ্ন হল, বিহারে জিতবে কে? কিছু সমীক্ষা বলছে, ফের নীতীশের হাত ধরে ক্ষমতায় আসছে এনডিএ-ই। জেডিইউ ও বিজেপি ছাড়া এনডিএ জোটে রয়েছে রামবিলাস পাসোয়ানের দল এলজেপি এবং দলিত নেতা জিতনরাম মাঝির হাম। দলিত ভোট কাটতেই জিতনকে মাসখানেক আগে নীতীশ এনডিএ-তে সামিল করান বলে সরব হয়েছিলেন রামবিলাসের পুত্র চিরাগ। যদিও শেষ পর্যন্ত এনডিএ-র ছাতাতেই লড়বে তাঁর দল। আজ এবিপি নিউজ় ও সি-ভোটারের সমীক্ষা জানিয়েছে, ২৪৩টি আসনে নীতীশরা পাবেন ১৪১-১৬১টি আসন। বিরোধী আরজেডি-কংগ্রেস জোট পাবে ৬৪-৮৪টি। জনমত সমীক্ষা অনেক সময়েই মেলে না, তবুও এতে ভোটারদের মনোভাবের আঁচ পাওয়া যায়। এনডিএ-র নরেন্দ্র মোদী-নীতীশ জুটির তুলনায় ধারে-ভারে বহু পিছিয়ে বিরোধীরা। দু’জনকে যিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারতেন, সেই লালুপ্রসাদ বর্তমানে কারাবন্দি। তাই দল ও জোটকে উজ্জীবিত করার দায়িত্ব এসে পড়েছে লালু-পুত্র তেজস্বীর উপরে। যদিও জেডিইউ সূত্রের মতে, ছেলেকে সামনে রেখে পিছন থেকে নীতীশকে মাত করার কৌশল জেলে বসে ঠিক করছেন লালুই।
আরও পড়ুন: বন্ধ জমায়েত, ভিডিয়োয় ভোট-প্রচার চায় কমিশন
আসন্ন নির্বাচনে ‘বিহার-পুত্র’ সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে চলেছে। অভিনেতার মৃত্যুরহস্য নিয়ে মহারাষ্ট্রে শিবসেনা-কংগ্রেস জোট সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণে নেমেছে বিজেপি। আবার বিহারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা শক্তিসিন গোহিলও বলেন, ‘‘সুশান্তের জন্য ন্যায় আমরাও চাই। মোদী-নীতীশ বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করে নজর ঘোরাচ্ছেন।’’ আত্মবিশ্বাসী হলেও জেডিইউ মনে করছে, জয়ে কাঁটা হতে পারে লকডাউনে রাজ্যে ফেরা কয়েক লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক, যাদের কারণে রাজ্যে ভোটার বেড়েছে ২.৩০ লক্ষ। চার ঘণ্টার নোটিসে লকডাউন করে প্রধানমন্ত্রী যে তাঁদের কথা ভাবেননি, সেই ক্ষোভ উস্কে দিতে নামছে কংগ্রেস-আরজেডি জোট। গোহিন বলেন, ‘‘মানুষ পরিবর্তন চাইছে। এনডিএ বুঝতে পারছে না, মাটি সরে গিয়েছে।’’
আরও পড়ুন: বিহার ভোটে বঙ্গের ১৮ পর্যবেক্ষক