চলছে কার্ফু, দোকান-বাজার-এটিএম বন্ধ, রাতেই প্রতিবাদ, কাশ্মীরে চলছে কাঁদানে গ্যাস

আমি অবশ্য বাড়ির আশপাশের খবরই জানি। বাকি তো কোথাও যেতে পারিনি। রাস্তাঘাট ফাঁকা।

Advertisement

সোয়েব কুরেশি

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৪৪
Share:

ছবি: এপি।

দিল্লিতে জরুরি কাজ আছে। তাই মা-বাবাকে একা রেখেই আজ চলে এলাম দিল্লিতে।

Advertisement

বাড়ি শ্রীনগরে। আইন পেশার সূত্রে থাকি দিল্লিতে। ২ অগস্ট বাড়ি গিয়েছিলাম। পরিস্থিতি অন্য রকম লাগছিল। অমরনাথে নাশকতার আশঙ্কা থাকলে বারামুলায় জাতীয় সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা হবে কেন? দু’টো এলাকা তো দু’দিকে। সাবধানের মার নেই ভেবে এটিএম থেকে টাকা তুলেছিলাম ৪ অগস্ট সকালে। ভাগ্যিস! দোকান-বাজার, এটিএম বন্ধ। কার্ফু চলছে। প্রত্যেকের বাড়িতেই আনাজ-বাগান থাকে। তা দিয়েই খাওয়াদাওয়া চলছে। অন্তত আমার বাড়িতে সে ভাবেই খাবার জুটছে। পরে কী হবে, জানি না।

আমি অবশ্য বাড়ির আশপাশের খবরই জানি। বাকি তো কোথাও যেতে পারিনি। রাস্তাঘাট ফাঁকা। কেউ দিনে গাড়ি নিয়ে বেরোলে সেনা আটকাচ্ছে। রাতের দিকে প্রহরা কম। লোকজন রাত ১০টার পর বাইরে যাচ্ছেন। এবং ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের প্রতিবাদ হচ্ছে। সেনাও পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে। ৪ অগস্ট থেকে রোজ রাতে আমার এলাকায় অন্তত তাই চলেছে। কোনও হিংসা বা গুলিচালনার ঘটনা এলাকায় ঘটেছে বলে শুনিনি। অন্যত্র কী হচ্ছে, জানার উপায়ই নেই।

Advertisement

চিরকুটেই শ্রীনগর-দিল্লির টিকিট।

শহরে হাসপাতাল সংলগ্ন ওষুধের দোকানগুলো খোলা। নার্সিংহোম, হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু যাবেন কী ভাবে? যাঁদের গাড়ি নেই, তাঁদের কেউ যদি অসুস্থ হন? অ্যাম্বুল্যান্স ডাকবেন কী করে, ফোনই তো বন্ধ! আগুন লাগলেও সেই অবস্থা। তিন দিন পরে এখন টিভিতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খবরের চ্যানেল নেই। যাঁদের বাড়িতে স্যাটেলাইট টিভি রয়েছে, তাঁরাই শুধু খবরের চ্যানেল দেখতে পেয়েছেন।

আজ ভোর ৪টের সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিমানবন্দরে গিয়েছি। নিজেদের গাড়িতে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ব্যারিকেড, সেনা। এ ভাবে জনজীবন স্তব্ধ করে দেওয়া ঠিক নয়। অন্তত ফোনটুকু চালু থাকুক। যাঁরা নিজের বাড়ি থেকে, কাশ্মীর থেকে দূরে রয়েছেন, তাঁদের মনের অবস্থা কী ভাবুন এক বার।

পথে তিন বার গাড়ি তল্লাশির পরে বিমানবন্দরের গেটের সামনে এক আত্মীয় যখন নামিয়ে দিয়ে গেলেন, তখন ভোর ৫টা। ওই গেট থেকে বিমানবন্দরের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার— হেঁটেছি। বিমানবন্দরে এসে দিল্লির টিকিট কাটলাম। সাদা কাগজে স্ট্যাম্প মেরে হাতে লিখে দেওয়া হল টিকিট। ইন্টারনেট সংযোগ নেই, টিকিটের প্রিন্ট হবে কী করে? আমার বিমানে যাত্রী ভর্তি ছিল। বিমানবন্দরে দীর্ঘ লাইন।

১৭ অগস্ট আমার বিয়ে করার কথা। হবু বৌ কাশ্মীরেরই মেয়ে। সে কেমন আছে, জানিই না। যোগাযোগ নেই। ১০ তারিখ ফিরে যাব। জানি, এখন শ্রীনগরে ঢোকা মুশকিল। কিন্তু আমি জানি, কোন রাস্তা দিয়ে বাড়ি পৌঁছতে হবে।

(অনুলিখন: চৈতালি বিশ্বাস)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement