—ফাইল চিত্র।
যে হাত পাথর ছুড়েছে এত দিন, সে হাতই এগিয়ে দিচ্ছে চা-বিস্কুট। কাশ্মীরের কোনও গ্রামে জঙ্গি-দমন অভিযানে যাওয়া নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা তো বটেই। বিস্মিত রাজ্য সিআইডি-ও। সম্প্রতি জমা দেওয়া এক রিপোর্টে রাজ্যের গোয়েন্দারা বলেছেন, টানা ৪৫ দিন ধরে চলা নিষেধাজ্ঞার আবহে ‘অবাক-করা’ কিছু ঘটনা ঘটেছে উপত্যকায়। কেন ঘটছে এমন ঘটনা, তা নিয়েই চিন্তায় তাঁরা।
উদাহরণ হিসেবে সাম্প্রতিক দু’টি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সিআইডি রিপোর্টে। একটি ঘটনা বারামুলার সোপোরের। যে সোপোরে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির বাড়ি। যেখানে জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের প্রভাব রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি সেই সোপোরেরই ডাঙ্গেরপোরা গ্রামে জঙ্গিরা লুকিয়ে আছে বলে খবর পেয়ে অভিযানে নামে পুলিশ, আধাসেনা ও সেনার যৌথ বাহিনী। রিপোর্টের বক্তব্য, ‘‘তিন ঘণ্টা চিরুনি তল্লাশির পরেও জঙ্গির খোঁজ মেলেনি। অভিযান শেষ হওয়ার পরে নিরাপত্তা বাহিনীকে চা-বিস্কুট ও খাবার খাওয়ান স্থানীয়রা। অথচ এঁরাই আগে পাথর ছুড়েছেন গ্রামে অভিযান চালাতে আসা সিআরপি জওয়ানদের উপরে। কাছের একটি সিআরপি ছাউনির জওয়ানেরা গত দু’বছর ধরে বারবার পাথরের মুখে পড়েছেন।’’ সেখানে এই অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ উল্টো।
কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ ও কড়াকড়ি শুরুর আগে দক্ষিণ কাশ্মীরে,বিশেষত পুলওয়ামায় বিক্ষিপ্ত ভাবে জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে বাহিনীর।রিপোর্টের দ্বিতীয় ঘটনাটি পুলওয়ামারই তহব এলাকার। গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, এখানে স্থানীয়দের পাথর ছুড়তে বারণ করেছে জঙ্গিরাই! মঙ্গলবার তহবে সেনার রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ছাউনিতে পাথর পড়ে। বুধবার মোটরবাইকে চড়ে হাজির হয় কিছু জঙ্গি। গ্রামের মুরুব্বিদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের বলে, যুব সম্প্রদায়কে সেনা ছাউনিতে পাথর ছুড়তে বারণ করা হোক। কেউ যেন রাস্তা অবরোধও না-করে। এক মাসে পুলওয়ামার অন্তত ১৩ যুবক নিখোঁজ হয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, তাঁরা জঙ্গি দলেনাম লিখিয়েছেন।
এক দিকে কার্ফু, নিরাপত্তার কড়াকড়ি, তরুণদের ‘নিখোঁজ’ হওয়া। অন্য দিকে গ্রামবাসী ও জঙ্গিদের এই আচমকা ‘গাঁধীগিরি’। সিআইডি রিপোর্ট স্পষ্টই বলছে, ‘‘দু’টো ব্যাপার একই সঙ্গে চলেছে, যা চিন্তার। যেখানে বিক্ষোভের আশঙ্কা ছিল, সেখানে সবাই এখন চুপ।’’ তাই পরিস্থিতি নজরে রাখা ও অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই
তা জানানোর জন্য রিপোর্টে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে।