National News

ছন্দ ফেরানোর সরকারি প্রচেষ্টা শুরু, ইদে সব কিছু স্বাভাবিক থাকবে তো, প্রশ্ন ঘুরছে উপত্যকায়

কেমন আছে কাশ্মীর? সরকারি মতে, ধীরে ধীরে হলেও ছন্দে ফিরছে কাশ্মীর। জম্মু ও কাশ্মীরের পাঁচটি জেলা এবং ডোডা ও কিশ্তওয়ারে কার্ফু তুলে দেওয়া হয়েছে। ইদ উপলক্ষে জনসাধারণের জন্য খোলা হয়েছে ইদগাহগুলি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৯ ১৯:৩৩
Share:

স্কুলের পথে। ছবি: পিটিআই।

প্রায় দেড় ঘণ্টা হেঁটে শ্রীনগরে ডেপুটি কমিশনারের অফিসে পৌঁছন রুনিয়া আমিন। চণ্ডীগড়ে তাঁর ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চান। তবে অফিসে পৌঁছে দেখেন, লম্বা লাইন। মাত্র ৪০-৫০ সেকেন্ড বরাদ্দ এক-এক জনের জন্য। ওই সময়ের মধ্যেই কথা শেষ করতে হবে। ভিড় দেখে অনেকেই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সেখান থেকেই ফিসফাস, ‘‘দু’দিনের মধ্যেই তো ইদ। আশা করি, সে দিন আমাদের ফোনে কথা বলতে দেবে!’’

Advertisement

শ্রীনগরের ডেপুটি কমিশনার শহিদ ইকবাল চৌধুরীর দফতরে দু’টি হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। স্থানীয় রেডিয়ো-টেলিভিশনে সে নম্বরের বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে। দফতরের এক কর্মী সেখানে মোবাইল ফোন নিয়ে বসেছেন। যাঁরা কথা বলতে আসছেন, তাঁদের নাম নথিভুক্ত করে রাখা হচ্ছে। তবে সেখানে বেশির ভাগ ফোন কলই আসছে উপত্যকার বাইরে থেকে। এ দিন দুপুর পর্যন্ত ১৭৫ জনের নাম নথিভুক্ত হলেও উপত্যকার মাত্র ২৩ জনই বাইরে কথা বলতে পেরেছেন। দফতরের এক কর্মী সাজিদ ভট্ট জানিয়েছেন, দিনে ৫০০-৬০০ ফোন কল আসছে। তাঁর কথায়, ‘‘রাত আড়াইটে পর্যন্ত আমার ফোন খোলা রয়েছে। বিদেশ থেকেও লোকজন ফোন করে তাঁদের আত্মীস্বজনের খোঁজ নিচ্ছেন।’’ আর এক কর্মী জুনেদ বলেন, ‘‘মানুষজন মরিয়া হয়েছে কথা বলার চেষ্টা করছে। তবে মাত্র দুটো নম্বর থাকায় তা করাটা বেশ কঠিন।’’

সোমবার ইদ। প্রতি বার ইদের আগে ঘরে ফিরতেন উপত্যকার বহু বাসিন্দার পরিজনেরা। নিদেনপক্ষে ফোনে কথাবার্তা চলত। তবে ৫ অগস্টের পর থেকে সে ছবিটা বদলের আভাস মিলছে। কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার পর উপত্যকা জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। দোকানপাট বন্ধ। যোগাযোগ ব্যবস্থায় রাশ টানা হয়েছে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক তার পর থেকেই বদলে গিয়েছে দৈনন্দিন ব্যস্ততার ছবিটাও।

Advertisement

আরও পড়ুন: কাশ্মীরে ফের পথে ডোভাল, ঘুরে দেখলেন বাজার থেকে ইদগাহ

শুক্রবার উপত্যকায় কার্ফু শিথিল হওয়ার পর বিক্ষোভে দেখান স্থানীয়রা। ছবি: পিটিআই।

কেমন আছে কাশ্মীর? সরকারি মতে, ধীরে ধীরে হলেও ছন্দে ফিরছে কাশ্মীর। জম্মু ও কাশ্মীরের পাঁচটি জেলা এবং ডোডা ও কিশ্তওয়ারে কার্ফু তুলে দেওয়া হয়েছে। ইদ উপলক্ষে জনসাধারণের জন্য খোলা হয়েছে ইদগাহগুলি। খুলেছে এটিএম, স্কুল-কলেজ। তবে স্থানীয় সূত্রে খবর, ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের ইস্যুতে রীতিমতো উত্তপ্ত কাশ্মীর। বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদে সরব হয়েছেন সাধারণ মানুষ। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের দাবি, গত তিন দিনে অন্তত ৪০ জন ছর্‌রা বুলেটে আহত হয়েছেন। ইতিমধ্যেই ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছে ফারুক আবদুল্লার দল ন্যাশনাল কনফারেন্স।

আরও পড়ুন: ছন্দে ফিরছে কাশ্মীর, সুপ্রিম কোর্টে গেল ওমর আবদুল্লার দল

শনিবার এক উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘জম্মু, কাঠুয়া, সাম্বা, উধমপুর এবং রিয়ালি জেলায় আজ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফের খোলা হয়েছে।’’ তাঁর মতে, ৫ অগস্টের পর থেকে উপত্যকায় ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। কোনও ধরনের অবাঞ্ছিত ঘটনার খবর মেলেনি। দোকানপাটও খুলছে। তাতে স্বস্তি মিলছে সাধারণের। তবে পুঞ্চ, রজৌরি বা রম্বানের মতো জেলায় এখনও কার্ফু চলছে।

উপত্যকায় ছন্দ দেখা দিলেও অন্য ছবিটাও রয়েছে। রুজিরোজগারের টানে আসা ভিন্‌ রাজ্যের শ্রমিকেরা উপত্যকা ছাড়ছেন। তবে এখনও পর্যন্ত সেই সংখ্যাটা কত, তা সরকারি ভাবে জানা যায়নি। বেসরকারি মতে, ইতিমধ্যেই ২০ হাজার শ্রমিক উপত্যকা ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

অনন্তনাগে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। দেখুন ভিডিয়ো

এই আবহে এ দিন উপত্যকায় ইদের প্রস্তুতি নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। উপত্যকার হাসপাতালগুলির পরিষেবা ব্যবস্থাও খতিয়ে দেখেছেন তিনি। রাজ্যপাল বলেন, ‘‘ইদের আগে স্থানীয় মানুষদের পুরোপুরি নিরাপত্তা দেওয়ার সব রকমের প্রচেষ্টা করছে প্রশাসন। যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্ভয়ে সকলে ইদ উদ্‌যাপন করতে পারেন।’’ জম্মু ও কাশ্মীরের এক আধিকারিক ইমতিয়াজ হুসেন বলেন, ‘‘কাশ্মীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। প্রশাসনের তরফে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনোর সব রকমের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও পুলিশের সঙ্গে মানুষ সহযোগিতা করছেন।’’

রাজ্য প্রশাসনের পাশাপাশি উপত্যকায় পরিস্থিতি নিয়ে বার্তা দিতে উদ্যোগী কেন্দ্রও। এ দিন অনন্তনাগে গিয়েছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। স্থানীয় মানুষদের সঙ্গেও কথাও বলেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement