ছবি: সংগৃহীত।
অমিত শাহের ঘোষণার পরে রাজ্যসভার করিডর থেকে প্রায় কাঁপতে কাঁপতে ছুটে আসছেন বিজেপির এক সাংসদ। হাত মুঠো করে স্লোগান দিচ্ছেন, ‘‘জঁহা বলিদান হুয়ে মুখার্জি, উয়ো কাশ্মীর হমারা হ্যায়। জো কাশ্মীর হমারা হ্যায়, উয়ো সারে কা সারা হ্যায়।’’ এক গাল হেসে বললেন, ‘‘ভাবতে পারেন, এক সময়ে আরএসএসের শাখায় শুধুই বলতাম, ৩৭০ অনুচ্ছেদ হটাতে হবে? আর আজ ভোট দিয়ে নিজে হটাব।’’
জম্মু-কাশ্মীরের সীমানা-ঘেঁষা পঞ্জাবের গ্রাম মাধোপুরে এক সময়ে নিজের আন্দোলন শুরু করেছিলেন জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। জম্মু-কাশ্মীরে প্রবেশের জন্য তখন ‘পারমিট’ লাগত। শ্যামাপ্রসাদ স্লোগান তুলেছিলেন, ‘‘এক দেশ মে দো বিধান, দো প্রধান, দো নিশান নেহি চলেঙ্গে।’’ ১৯৫৩ সালে এই মাধোপুর গ্রাম থেকেই বিনা পারমিটে জম্মু-কাশ্মীরে প্রবেশ করেন শ্যামাপ্রসাদ। রাজ্যের সরকার তাঁকে জেলে পুরে দেয়, সেখানেই রহস্যজনক মৃত্যু হয় তাঁর। এর পর থেকে জনসঙ্ঘ ও পরে বিজেপি নিজেদের কর্মসূচিতে বরাবর ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের কথা লিখে এসেছে। সঙ্গে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু ও অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের কথাও থাকত নিয়ম করে।
আজ ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পথ প্রশস্ত হওয়ার পরে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার খুশি। তবে সঙ্ঘ নিজের কর্মীদের প্রকাশ্যে বেশি উচ্ছ্বাস দেখাতে বারণ করেছে, বিশেষত জম্মু-কাশ্মীরে। বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘তিন তালাক বিল পাশের পরে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদও বিলুপ্ত হতে চলল। বাকি রইল রামমন্দির। আগামিকাল থেকে সুপ্রিম কোর্টে রামমন্দির নিয়ে রোজ শুনানি। ফলে এ বছরের মধ্যে সেটিও শেষ হবে। বিজেপি আর সঙ্ঘের সব প্রধান কর্মসূচিই পূর্ণ হওয়ার পথে।’’
শ্যামাপ্রসাদ ও ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ
• ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদের ঘোর বিরোধী ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
• জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের বিরুদ্ধে লড়াই তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল জনসঙ্ঘের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়
• ভারতীয়দের ‘পারমিট’ নিয়ে কাশ্মীর যাওয়ার নিয়মের প্রতিবাদ করেন
• ১৯৫৩ সালে ওই নিয়ম ভেঙে কাশ্মীরে ঢুকে শেখ আবদুল্লা সরকারের হাতে গ্রেফতার হন
• ১৯৫৩ সালের ২৩ জুন কাশ্মীরে বন্দি অবস্থায় মৃত্যু হয়। কী ভাবে, মৃত্যু তা নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে
• শ্যামাপ্রসাদের আন্দোলনের জেরেই ‘পারমিট’ নিয়ে যাওয়ার নিয়ম লুপ্ত হয়
সব যদি হয়েই গেল, তা হলে বাকি চার বছর মোদী সরকার কী করবে? বিজেপি নেতাদের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী সংসদেই বিরোধীদের বলেছিলেন, পরের ভোটে নতুন কর্মসূচি নিয়ে আসবেন। চিন্তা করবেন না। মোদী থাকলে সবই সম্ভব।’’ গেরুয়া শিবিরের অনেকেই দাবি তুললেন, ৫ অগস্টকে ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দিবস’ বলে ঘোষণা করা হোক। আজ ‘ঐতিহাসিক’ দিন। আজ তাঁর স্বপ্ন পূরণ হল। আবার অনেকের দাবি, কাশ্মীরের লাল চকের নাম হোক শ্যামাপ্রসাদের নামে।
“রাজ্যপালের সম্মতি নিয়ে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে এই পরিবর্তন করা বৈধ মনে করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তা কত দূর ঠিক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে। ইতিমধ্যেই জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ও সেই রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দার সংজ্ঞা নিয়ে মামলা হয়েছে।
আমার মেজোকাকা (শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) এক দেশ এক নিশান-এর জন্য লড়াই করেছিলেন। তিনি সেই মতবাদে বিশ্বাস করতেন। রহস্যজনক পরিস্থিতিতে তাঁর মৃত্যু হয়। এত দিনে বিষয়টি বাস্তবায়িত হওয়ায় আমি ব্যক্তিগত ভাবে নিশ্চয়ই খুশি। যে-পদ্ধতিতে তা করা হল সেই পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে।”
—চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন
প্রধান বিচারপতি ও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ভাইপো
কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে আজ যৌথ বিবৃতি দেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত ও সরকার্যবাহ সুরেশ (ভাইয়াজি) জোশী। বলেন, ‘‘সরকারের এই সাহসী পদক্ষেপকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এটি জম্মু-কাশ্মীর-সহ পুরো দেশের জন্য খুবই প্রয়োজন ছিল। নিজের স্বার্থ ও রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে সকলের উচিত একে স্বাগত জানানো।’’ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যনির্বাহী সভাপতি অলোক কুমারও বলেন, ‘‘এই সাহসী পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। এতে জম্মু-কাশ্মীর-সহ পুরো দেশের উন্নয়নের পথ প্রশস্ত হবে। জনতা এই পদক্ষেপকে দৃঢ়তার সঙ্গে সমর্থন করবে।’’ চলতি মাসেই বিজেপি ও সঙ্ঘের মধ্যে সমন্বয় বৈঠক বসছে। সেখানে সবিস্তার আলোচনা হবে।